-->
শিরোনাম
ইফতারিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম

ধনী-গরিবের মিলনমেলা

ইফ্ফাত শরীফ
ধনী-গরিবের মিলনমেলা
বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদে একসঙ্গে ইফতার করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মুসল্লিরা

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র রমজান মাসের আগমন মানেই এক ভিন্ন আবহের সৃষ্টি হওয়া। মুসল্লিদের ইবাদত বন্ধেগির মধ্যেই দিনভর মুখরিত থাকে মসজিদ প্রাঙ্গণ।

বিকেল হলেই (বাদ আসর) আয়োজন শুরু হয় ইফতারের। ধনী-গরিব সবাই মিলে এক কাতারে বসেন ইফতার করার জন্য। অনেকে নিজ থেকে ইফতার নিয়ে হাজির হন মসজিদ চত্বরে।

নেকির আশায় ভাগাভাগি করেন অন্যের সঙ্গে নিজের ইফতারি। রমজান মাসজুড়ে আয়োজন হয়ে হাজারও মানুষের ইফতারির। ইফতারকে কেন্দ্র করে জাতীয় মসজিদ এ সময় পরিণত হয় ধনী-গরিবের মিলনমেলায়।

জানা গেছে, ইফতারের আগে সমবেত হন হাজারো রোজাদার। এত মানুষের সঙ্গে বসে ইফতার করতে পেরে যেন তাদের আনন্দের কোনো শেষ নেই। সবাই বসেছেন এক সঙ্গে। ইফতার করছেন মুখোমুখি হয়ে।

নেই কোনো বৈষম্য বা হিংসা-বিদ্বেষ। সারিবদ্ধ হয়ে বসে পড়েন ইফতারকে সামনে নিয়ে। জাতীয় এ মসজিদের ইফতারে ধনী-গরিব, ফকির, মিসকিন, ছিন্নমূল ও প্রতিবন্ধী রোজাদার মুসল্লিরা এক কাতারে বসে ইফতার করেন।

প্রতিবছরের মতো এবারও নিয়মিতভাবে ইফতারের আয়োজন করছে বায়তুল মোকাররম ব্যবসায়ী সমিতি, তাবলিগ জামাত, ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং বাংলাদেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত ইফতার আয়োজন করে আসছে।

গতকাল বায়তুল মোকাররম ঘুরে দেখা যায়, হাজারো রোজাদার ইফতারি নিয়ে বসে আছেন। কেউ ইফতার সামনে নিয়ে দোয়া-দরুদ পড়ছেন। কেউবা আবার ইমামের বয়ান শুনছেন।

ইফতার সামনে রেখে আল্লাহকে স্মরণ করছেন সব রোজাদার। ধর্মীয় ভ্রাতৃত্বের অন্যরকম চিত্র লক্ষ্য করা গেল মসজিদটিতে।

পূর্ব পরিচয় না থাকলেও পরস্পরের মধ্যে অপূর্ব দরদ লক্ষ্য করা গেল। সংযমের মাধ্যমে স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ। মানুষের সঙ্গে মানুষে ভ্রাতৃত্ব গড়ার এক আদর্শ সময় হচ্ছে রমজান।

জুনায়েদ হোসেন নামের এক বেসরকারি কর্মজীবী লোক ঢাকার শান্তিনগর থেকে এখানে এসেছেন ইফতার করতে। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, এখানে ধনী-গরিব নেই, সবাই মুসল্লি। আমার এখানে ইফতার করতে অনেক ভালো লাগে।

আমার অফিস পল্টনে সেখানে ইফতার এর ব্যবস্থা আছে। তার পরেও মসজিদে এসেছি। এখানে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ইফতার করে থাকেন। এক সঙ্গে অনেক মানুষ। ইমামের সঙ্গে আমিন বলে আল্লার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা বা ক্ষমা পাওয়ার আশায় এখানে আশা। তাই এখানে ইফতার করতে এসেছি।

তিনি বলেন, বিনামূল্যে ইফতার এটা কেউ দেখেন না। সবাই মিলে ইফতার করতে পারছি এটাই বড় বিষয়।

মসজিদের পূর্ব পাশে প্রতিদিন ৬০০ থেকে হাজার মুসল্লির জন্য ইফতারির আয়োজন হয়ে থাকে। এর মধ্যে তাবলিগ জামাতের বায়তুল মোকাররম মসজিদ শাখা ভিন্নভাবে আয়োজন করে থাকে।

তারাও ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনির সঙ্গে কলা, জিলাপি মিশিয়ে ইফতারি করান। এ ছাড়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে সাধারণ মুসল্লিদের জন্য আলাদা ইফতারির আয়োজন করে বায়তুল মোকাররম ব্যবসায়ী সমিতি।

সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিদিন ইফতার সামগ্রী পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ বছর মুসল্লিদের জন্য ইফতারের আয়োজন করেছে দেশের সুনামধন্য শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা।

মসজিদের মুসল্লি আপ্যায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন গাজী ভোরের আকাশকে জানান, পূর্বপাশে তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে চারশ থেকে পাঁচশ মানুষের আয়োজন করা হয়।

আর দক্ষিণ পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ পাঁচশ থেকে ছয়শ মানুষের ইফতার করায়। সব মিলে প্রতিদিন হাজার বারশ মানুষ এই জাতীয় মসজিদে ইফতার করে থাকে।

প্রতিদিন এখানে মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, খেজুর, জিলাপি, পানির বোতল, কলা সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া আরো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যার যার মতো ইফতারের আয়োজন করে এখানে।

রোজা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ইফতার ছাড়াও তাদের আয়োজনের মধ্যে আছে কুরআন তেলাওয়াত, বিনামূল্যে কুরআন বিতরণ, কুরআন শিক্ষা দেয়া, মহিলাদের জন্য কুরআন শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা, মাসব্যাপী ইসলামিক বইমেলা, আলোচনা সভা ইত্যাদি।

 

 

মন্তব্য

Beta version