-->
শিরোনাম

মুচলেকা দিয়ে মধ্যরাতে ছাড়া পেলেন মা-ছেলে

ভোরের আকাশ ডেস্ক
মুচলেকা দিয়ে মধ্যরাতে ছাড়া পেলেন মা-ছেলে
সৈয়দা রত্না

রাজধানী ঢাকার কলাবাগানে একটি খেলার মাঠে পুলিশের থানা-ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে এলাকাভিত্তিক আন্দোলনের একজন সংগঠক সৈয়দা রত্না এবং তার ছেলেকে পুলিশ আটক করার পর গতকাল রোববার (২৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে ছেড়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিতোষ চন্দ্র বলেন, সৈয়দা রত্না মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। মুচলেকায় কী লেখা ছিল জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি তার ( সৈয়দা রত্না) ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং এমন কাজ তিনি আর করবেন না- এটা লিখিতভাবে জানিয়েছেন।’

এরপর মধ্যরাতে সৈয়দা রত্না এবং তার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

গতকাল রোববার বেলা পৌনে ১১টায় তাকে আটক করে কলাবাগান থানায় নিয়ে যাওয়ার পর থেকে থানার পুলিশ সদস্যরা সৈয়দা রত্নার পরিবারকে পরামর্শ দেয় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য।

কিন্তু পরিবার বলছে, থানার ওসি দুপুর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত থানায় আসেননি এবং তারা তার সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেননি।

কী হয়েছিল?

রোববার সকালে পুলিশের একটি দল তেঁতুলতলা মাঠ নামে পরিচিত একটি মাঠে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। বছর-খানেক ধরে এই মাঠটিতে থানা-ভবন না তোলার জন্য এলাকাভিত্তিক একটি আন্দোলন চলছিল। এই আন্দোলনের একজন সংগঠন সৈয়দা রত্না।

পুলিশ নির্মাণ কাজ শুরু করলে সৈয়দা রত্না সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি লাইভ করছিলেন। এক মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ওই লাইভটি চলার এক মিনিট দুই সেকেন্ডের সময় ডোরাকাটা গেঞ্জি পরা একজন ব্যক্তি সৈয়দা রত্নাকে ধমকাতে শুরু করেন। লাইভ বন্ধ করতে বলে শুরু হওয়া ধমকের সঙ্গে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যোগ দেন আরো কয়েকজন। শেষ কয়েক সেকেন্ডে কারো মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না, তখনো ধমকের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এক পর্যায়ে ফোনটি কেড়ে নেওয়ার এবং লাইভটি বন্ধের শব্দ পাওয়া যায়।

সৈয়দা রত্নার মেয়ে শেউতি সাগুফতা বলেন, বেলা পৌনে ১১টার সময় ওই লাইভ চলার সময়ই তার মাকে কয়েকজন মহিলা পুলিশ টেনে-হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। এর কয়েক মিনিট পর তার কলেজ পড়ুয়া ভাইকেও পুলিশ তুলে থানায় নিয়ে যায়।

পরিবারের অভিযোগ, তেঁতুলতলা মাঠ নামে পরিচিত কলাবাগানের ওই মাঠটিতে থানার ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় তাদের আটক করা হয়েছে।

কী বলছে পরিবার?

সৈয়দা রত্নার মেয়ে শেউতি সাগুফতা বলেছিলেন, প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে তার মা এবং ভাই থানায় আটক থাকলেও তারা পুলিশের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘সারাদিন ধরে আমার মা এবং ভাইকে থানায় আটকে রেখেছে। কিন্তু আমাদের বলা হচ্ছে না কেন তাদের আটকে রাখা হয়েছে। কোনো তথ্যই দিচ্ছেন না উনারা। ডিউটি অফিসার বলছে, ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু উনাকে রিচ করার সব রকম চেষ্টাই করা হয়েছে, পাচ্ছি না আমরা।’

‘ফোন করা হচ্ছে, উনি ধরছেন না। থানায়ও আসেননি। প্রথমে বলেছে, ২টায় আসবেন, এরপর বলেছে ৪টায়, এরপর বলেছে ইফতারের আগে, তারপর বলেছে ইফতারের পরে। কিন্তু এখন রাত ৮টা বাজে এখনো উনি আসেননি,’ বলেন তিনি।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, কোনো কর্মকর্তা তার সঙ্গে কথাও বলেননি। কিন্তু তাকে বসিয়ে রেখেছে। কখন বা কেউ তার সঙ্গে কথা বলবেন কিনা, বা কেন তাকে আর আমার ভাইকে তুলে নিয়ে গেছে তাও আমাদের জানানো হবে কি-না, আমরা জানি না।’

তিনি অভিযোগ করেছেন, তার ভাইকে বিনা কারণে তুলে নেওয়া হয়েছে। ‘আমার ভাইয়ের বয়স ১৭, ও তো নাবালক। আমার ভাই আমার মাকে খুঁজতে বেরিয়েছিল, এটা কি কোনো অপরাধ?’

আটক সৈয়দা রত্না কে?

সৈয়দা রত্না একজন সংস্কৃতিকর্মী। ফেসবুকেও তার ছয় হাজারের বেশি অনুসারী রয়েছেন। তিনি কয়েকটি পরিবেশবাদী, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক সংগঠনের কর্মী।

আজ সোমবার তার মুক্তি চেয়ে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল উদীচী, বেলা, বাপা, নিজেরা করি এবং গ্রিন ভয়েজসহ কয়েকটি সংগঠন। তার আটকের খবরে অনেক সংস্কৃতি-কর্মী প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে তার মুক্তি চেয়ে পোস্ট দেন।

পুলিশ কী বলছে?

পুলিশ বলছে, কলাবাগানের ওই জমিটিতে সরকারি ভবন তোলার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেওয়া হয়েছে। নির্মাণকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সৈয়দা রত্না এবং তার ছেলেকে আটক করা হয়েছে বলে বলছে পুলিশ।

তবে বিষয়টি নিয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শরিফ মো. ফারুকুজ্জামান বলেছেন, এখন তারা কলাবাগান থানায় আছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, অপরাধের প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ফারুকুজ্জামান বলেছেন, সৈয়দা রত্না নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করেছেন এবং সামাজিক মাধ্যমে 'হেট-স্পিচ' বা ঘৃণা ছড়াচ্ছিলেন।

খেলার মাঠে স্থাপনা

বাংলাদেশে শহর এলাকা বিশেষ করে ঢাকায় গত কয়েক দশকে খেলার মাঠ দখল করে একের পর এক স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। কোথাও সরকারি ভবন, কোথাও বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করে খেলার মাঠ এবং খোলা জায়গা ক্রমশ কমে এসেছে।

তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা বলছিলেন, থানা ভবন তোলার বিরোধী নন তারা। কিন্তু তেঁতুলতলার মাঠটিতে তাদের সন্তানেরা খেলাধুলা করেন এবং বয়স্ক মানুষেরা সকাল-বিকাল হাঁটেন। ফলে তারা চান এই মাঠটি যাতে মাঠ হিসেবেই থাকে।

বিবিসি

মন্তব্য

Beta version