-->

জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন চকরিয়ার জীবন

চট্টগ্রাম ব্যুরো
জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন চকরিয়ার জীবন
জব্বারের বলী খেলার এবারের আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তারিকুল ইসলাম জীবন

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলার এবারের আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তারিকুল ইসলাম জীবন। জব্বারের বলী খেলার ১১৩তম আসরের মধ্যে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৩ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন রামুর দিদার বলী। এই বলী খেলার অঘোষিত সম্রাট দিদার বলী অবসরে চলে গেছেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এই বলী খেলার ১১০তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হন কুমিল্লার শাহজালাল বলী। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে জব্বারের বলী খেলা হয়নি। তাই এবারের ১১৩তম আসরে কে হচ্ছেন চ্যাম্পিয়ন তা নিয়ে কৌতুহলের শেষ ছিল না। সেই কৌতুহলের সমাপ্তি ঘটিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তারিকুল ইসলাম জীবন।

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জীবন বলী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন ছিল জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। ২০১৮ সালে এই বলী খেলার ১০৯তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। গতবার (১১০তম আসর) শাহজালাল বলীর কাছে শিরোপা হাত ছাড়া হওয়ায় এবার সেই শাহজালালকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত।’

এবার ফাইনাল বাউটে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জীবন বলী ও শাহজালাল বলীর মধ্যে তুমুল লড়াই হলেও কেউ কাউকে হারাতে পারেননি। দু’দফা সময় বাড়ানোর পরও চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত পয়েন্টে এগিয়ে থাকা জীবন বলীকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। চ্যাম্পিয়ন হওয়া জীবন বলীকে ক্রেস্টের পাশাপাশি ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়। রানার্সআপ বলী শাহাজালালকে দেয়া হয় ১৫ হাজার টাকা। এছাড়াও ৩য় হওয়া বলীকে দেয়া হয় ছয় হাজার টাকা এবং ৪র্থ হওয়া বলীকে দেয়া হয় পাঁচ হাজার টাকা।

প্রতি বছর লালদীঘির ময়দানে এই জব্বারের বলী খেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই মাঠে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঐতিহাসিক ছয় দফা মঞ্চ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার ম্যুরাল স্থাপন, কিডস কর্নার, ঘাস লাগানো, সীমানা প্রাচীর, ফটক নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

মাঠটি যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন, তাই সেটি এখনো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়নি। সেজন্য এবার লালদীঘি মাঠ পাওয়া না যাওয়ায় ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তবে শেষ মুহুর্তে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর উদ্যোগে এই বলী খেলার আয়োজন করা হয় লালদীঘি মাঠের পাশে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চত্বরে বাঁশ, কাঠ ও বালি দিয়ে তৈরী ২০ ফুট বাই ২০ ফুটের অস্থায়ী মঞ্চে।

সোমবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর এই বলী খেলার ১১৩তম আসরের উদ্বোধন করেন। চ্যানেল আই এই বলী খেলা সরাসরি সম্প্রচার করেছে। এই বলী খেলার এবারের আসরের প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘১৯০৯ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে লড়তে দেশের তরুণ-যুবকদের শারীরিকভাবে তৈরি করতে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার এই বলী খেলার প্রচলন করেছিলেন। ১১৩ বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে এই জব্বারের বলী খেলা এখনো মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এবার মাঠের অভাবে এই বলী খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে সেটি মেনে নিতে পারিনি। তাই আমি উদ্যোগ নিয়ে লালদীঘি মাঠের পাশে রাস্তায় অস্থায়ী মঞ্চ করে এবারের বলী খেলার আয়োজন করেছি। শেষ পর্যন্ত আয়োজন হওয়ায় এবার লাখ লাখ মানুষ এই বলী খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছেন।’

জব্বারের এই বলী খেলায় এবার প্রথম রাউন্ড, কোয়ার্টার ফাইনাল (চ্যালেঞ্জিং বাউট), সেমি ফাইনাল ও ফাইনালে (চ্যাম্পিয়ন বাউট) মোট ৭২ জন বলী অংশ নেন। এর মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ বলী মেজবা’র বয়স মাত্র ১৪ বছর। এছাড়াও ৭০ বছর বয়সী খাজা আহম্মেদ ছিলেন সবচেয়ে বেশি বয়সী বলী।

নগরীর পতেঙ্গা থানার পূর্ব কাঠগড়ের বাসিন্দা খাজা আহম্মেদ বলী জানান, তিনি ১০ বছর বয়স থেকে দেশের নানা প্রান্তে বলী খেলায় অংশ গ্রহণ করে বহুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এই ৭০ বছর বয়সে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার ১১৩তম আসরে অংশগ্রহণ করে প্রাথমিক রাউন্ডে জয়লাভ করেছেন। এই জব্বারের বলী খেলায় ৩০ বছর আগে একবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯০৯ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে লড়তে দেশের তরুণ যুবকদের শারীরিকভাবে তৈরি করতে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার এই বলী খেলার প্রচলন করেছিলেন। নগরীর লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত এই জব্বারের বলী খেলা প্রথম থেকেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এই বলী খেলাকে ঘিরে লালদীঘির বিশাল এলাকাজুড়ে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলাও। যে মেলায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন কুটির ও লোকজ সামগ্রীর পসরা নিয়ে মেলায় হাজির হন ব্যবসায়ীরা। শুরুথেকেই গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত সকল জিনিসপত্রই পাওয়া যেত এই মেলায়। সেই ধারাবাহিকতা এখনও অটুট রয়েছে।

 

 

মন্তব্য

Beta version