মাঠ রক্ষার দাবি উপেক্ষা করে রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানা নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আগের মতো পুলিশি পাহারায় এ নির্মাণকাজ চলছে। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা গেছে, পুলিশ সদস্যরা মাঠে অবস্থান করছেন। নির্মাণকর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পুলিশ সদস্যরা জানান, ওপরের নির্দেশ অনুযায়ী তারা এখানে অবস্থান করছেন এবং তদারকি করছেন।
আজ সকাল থেকে দেখা গেছে, কলাবাগান থানার ১৫ জন পুলিশ সদস্য তেঁতুলতলা মাঠে অবস্থান করে নির্মাণকাজ তদারকি করছেন। এখন তেঁতুলতলা মাঠের চারদিকে দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। রাস্তার পাশে রাখা হয়েছে বালি-ইট-সুরকি। দেয়াল নির্মাণের জন্য রড স্তুূপ করে রাখা হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে নির্মাণকাজ চলাকালে মাঠের ভেতরে চার শিশুকে বসে থাকতে দেখা যায়। নির্মাণ শ্রমিকদের উদ্দেশে এ শিশুদের বলতে শোনা যায়, ‘আংকেল, কাজ বন্ধ করেন।’
শিশুরা জানায়, তারা আগে এ মাঠে খেলত। কিন্তু পুলিশ নিষেধ করার পর থেকে আর খেলছে না। মাঝেমধ্যে এলাকার স্থানীয় কিছু অধিবাসীকে মাঠের কাছে আসতে দেখা যায়। তবে তাদের নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে আবার ফিরে যান।
তেঁতুলতলা মাঠে থানা নির্মাণের বিরোধিতা করছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, এখানে থানা নির্মাণ হলে ছেলেমেয়েরা খেলার জন্য কোনো জায়গা পাবে না। আর আশপাশে কোনো মাঠ নেই, যেখানে ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে। তেঁতুলতলা মাঠে থানা স্থাপন হলে ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করা থেকে বঞ্চিত হবে।
নির্মাণকাজে যুক্ত মো. বুলবুল নামের এক শ্রমিক বলেন, মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে তারা কাজে আসেন। ইতোমধ্যে তারা পিলারের রড দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। এরপর তারা পিলার ঢালাইয়ের কাজ শুরু করবেন।
মাঠে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা রাজি হননি। তারা কলাবাগান থানায় গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
তবে কী কারণে তাদের এখানে রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ সদস্য বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা এখানে রয়েছি। আর বেশি কিছু বলতে পারব না। আমরা এসব বিষয় তদারকি করছি। যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমরা নজর রাখছি।’
তেঁতুলিয়া মাঠের পাশের এক দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, টানা তিন দিন ধরে নির্মাণকাজ চলছে। মাঠে পুলিশের সদস্যরাও উপস্থিত থাকছেন। গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তিনি দোকান বন্ধ করেন। তার আগেও তিনি মাঠে কিছু পুলিশ সদস্যদের দেখেছেন।
এলাকাবাসীর একজন আবদুল লতিফ বলেন, এটি এ এলাকার একমাত্র মাঠ। শিশুদের খেলাধুলাসহ নানা কারণে মাঠটি থাকা দরকার। জায়গার এত অভাব পড়ল যে এখন এলাকার একমাত্র মাঠ দখল করে থানা ভবন বানাতে হবে! এখানে জোর করে থানা ভবন করে পুলিশ ও এলাকাবাসীকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে।
মাঠ রক্ষার আন্দোলনে থাকা সৈয়দা রত্না গণমাধ্যমকে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। আমি আশাবাদী, এই মাঠটি রক্ষা পাবে। এই মাঠ রক্ষা পেলে আমার আন্দোলন সফল হবে। মাঠটি খোলামেলা থাকুক, এখানে যেন কোনো স্থাপনা নির্মাণ না হয়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমার কিছু চাওয়ার নেই। শিক্ষার্থী কিংবা ছোট বাচ্চারা মাঠে যেন খেলাধুলা করতে পারে এটাই আমি চাই।
এদিকে আজ মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জনস্বার্থে সরকার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর কলাবাগান থানা নির্মাণের জন্য দেশের প্রচলিত সব আইনকানুন মেনে বরাদ্দ দিয়েছে। এক্ষেত্রে ডিএমপি কোনো ব্যক্তির বা সংস্থার জমিতে বেআইনিভাবে থানা ভবন নির্মাণ করছে না। বিকল্প খেলার মাঠ ব্যবস্থার বিষয়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এখতিয়ারভুক্ত নয়।
প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, জনস্বার্থে কলাবাগান থানার জন্য ধানমন্ডি মৌজার ০.২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭ এর সকল বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়েছে। কলাবাগান থানার জন্য অধিগ্রহণকৃত ০.২০ একর জমি জরিপ অনুযায়ী সরকারি সম্পত্তি ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন।
এর আগে গত সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠের জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজতে সবাইকে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও থানা ভবন করাটা অতীব জরুরি। কারণ, থানা এখন ভাড়া ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা পরবর্তী সময়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন, কী করা যায়।
মন্তব্য