রাজধানী ঢাকা শহরের প্রধান সড়কগুলোর দুই পাশজুড়েই ঝুলছে তার। বিদ্যুতের খুঁটিকে আশ্রয় করে এই তারের জঞ্জাল দেখা যায় অলিগলিতেও। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের তার ঝুঁলছে রাস্তার দুই ধারে। ঢাকার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে এমন কোনো ফাঁকা জায়গা নেই যেখানে তারের দেখা নেই। কোথাও কুণ্ডলী পাকিয়ে একসঙ্গে রাখা হয়েছে, আবার কোথাও ইন্টারনেটের সংযোগস্থলের তার একই সঙ্গে বেঁধে ছোট করে রাখা হয়েছে। শহরের প্রধান সড়কগুলোর বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ঝুলে আছে নানা সংযোগের তার। তারগুলো কোন সংস্থার কিংবা কী কাজের জন্য রাখা হয়েছে, বাসাবাড়ি কিংবা অফিসে দেওয়া তারগুলোয় কোন ধরনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে তা বোঝার উপায় নেই। শুধু ঝুলন্ত তার নয়, টুকরো টুকরো তারও রাস্তার ওপর যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রতিটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে অতিরিক্ত তারের জঞ্জাল থাকার কারণে যেকোনো সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
মাঝেমধ্যে এই ঝুলন্ত তার উচ্ছেদে সিটি করপোরেশনকে অভিযান পরিচালনা করতে দেখা গেলেও ফের ফিরে আসে আগের অবস্থায়। দিন দিন এই ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল বাড়ছেই। যেন এর থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই। তারবিহীন নগরী গড়ে তুলতে একটি যুগোপযোগী ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা সময়ের দাবি নগরবাসীর। তাদের বক্তব্য, বিদ্যুৎ ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মধ্যে দ্রুত সমন্বয় জরুরি।
রাজধানীর সড়কে সৌন্দর্য বাড়াতে এবং কম খরচে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে ২০০৮ সালে ঝুলন্ত তার অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। এ জন্য তাদের ফাইবার অ্যাট হোম, সামিট কমিউনিকেশন্সকে নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে এনটিটিএন লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এরপর ডিএসসিসির ধানমন্ডি এলাকার সাত মসজিদ রোডসংলগ্ন আশপাশের এলাকায় এবং ডিএনসিসির গুলশান এভিনিউ ও উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের তিনটি সড়কে মাটির নিচ দিয়ে সংযোগ নেওয়ার কাজ শুরু হয়। উত্তরা ৪, ৬ ও ১১ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন সড়কে এবং গুলশানের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এলাকা থেকে বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে মাটির নিচে তার স্থাপনের কাজ শুরু করলেও তা এখন বন্ধ।
সূত্র বলছে, শুরুতে ২ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক। কিন্তু আজো সড়কে ঝুলছে সেই তার। তারের জঞ্জাল শুধু শহরজুড়েই তা নয় এ জঞ্জাল এখন পৌঁছেছে গ্রাম পর্যায়েও। এসব তারের জঞ্জাল থেকে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর এই তার হতে পারে মৃত্যু ফাঁদও।
সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরবাসীর জীবনমান ঝুঁকির বিবেচনায় তারের জঞ্জাল উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি সড়কের তারও প্রায়ই অপসারণ করছে সিটি করপোরেশন।
পল্টন এলাকার ব্যবসায়ী ওলী আহমেদ বলেন, এটা নিয়ে আমরা যন্ত্রণায় আছি। প্রায়ই দোকানের সামনে ডিসলাইন ও ইন্টারনেটের তার ঝুলে থাকে। অনেকের চোখেমুখে লাগে। অনেক সময় মাটিতে পড়ে থাকে। কারো পায়ে লাগে। বিভিন্ন সময় আমরা কোনোরকমে এগুলো গুছিয়ে রাখি।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, আমাদের ঢাকাকে একটি পরিকল্পিত ও আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে অবশ্যই এ জঞ্জালের সমাধান জরুরি। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে লাইন চলাচলের কাজ শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আরো নজর দেবেন বলে আশা করছি।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বাপ্পী সর্দার বলেন, ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব খানেই যত্রতত্র তারের ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এটি একদিকে যেমন পরিবেশের জন্য ক্ষতি করছে অন্যদিকে জানমালের ক্ষতি করছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আন্ডারপাস কেব্ল সিস্টেম ডেভলপ করা, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা, ইলেকট্রিক তার ও খুঁটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো বেশি সচেতন হতে হবে।
মন্তব্য