-->
ঢাকার দুই মেয়রের দুই বছর

কোথাও সফলতা-কোথাও ব্যর্থতা!

# নানা সংকটে জর্জরিত শহর # নাগরিক প্রত্যাশার শেষ নেই # করোনার থাবায় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ধীরগতি # পূর্ণ মেয়াদের মধ্যে ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’

নাজমুল হাসান রাজ
কোথাও সফলতা-কোথাও ব্যর্থতা!

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে পাঁচ বছর মেয়াদে নির্বাচিত হন দুই নগর পিতা। ইতোমধ্যে দায়িত্বের দুই বছর অতিক্রম করেছেন তারা। ৭৩০ দিনে নগরবাসীর চাহিদা পূরণে কতটুকু সফল হয়েছেন তারা? এ নিয়ে রয়েছে বিস্তর আলোচনা। অনেকে বলছেন, ইশতেহার অনুযায়ী প্রতিশ্রুতিই বা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন মহাসংকটে জর্জরিত এই শহরের।

মেয়রদের সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর আটকে ছিল বৈশ্বিক মহামারি করোনায়। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, শহরজুড়ে সমস্যার শেষ নেই। এর মধ্যে উত্তর সিটির জন্য যানজট নিরসন, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা, পরিচ্ছন্ন নগরীতে সবুজের রেখা, খাদ্য, জলাবদ্ধতা, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, সড়ক বাড়ানো ও উন্নয়ন, খাল উদ্ধারসহ অন্তত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়েই তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। এর মধ্যে কিছুকিছু ক্ষেত্রে সফলতা লক্ষ্য করা গেলেও অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা রয়েই গেছে।

অবশ্য দায়িত্ব পালনের দুই বছর পূর্তিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম নিজের সফলতা ব্যর্থতার চিত্র সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক তুলে ধরে বলেছেন, মেয়াদের মধ্যে ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’ গড়ে তুলতে চাই। আগামীকাল ১৬ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সংবাদ সম্মেলন করে দুই বছরের উন্নয়নের নানা তথ্য তুলে ধরার কথা রয়েছে।

তবে সংবাদ সম্মেলন শেষে ভোরের আকাশকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, খাল, জলাশয়, ফুটপাথ, খেলার মাঠ, পার্ক দখলমুক্ত ও উদ্ধারে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। করোনার কারণে কাজে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। মেয়াদের বাকি সময়ে ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি।

এর আগে গুলশান-২ এ নগর ভবনের প্রধান কার্যালয়ের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ডিএনসিসি কার্যক্রমের সন্তুষ্টির বিষয়টি জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। সন্তুষ্টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন নগরবাসী। দায়িত্বগ্রহণের পরে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪২টি হটস্পট। গত বছর সেটি ছিল ১০১টি এবং এ বছর সেটিক ৪২টিতে নামিয়ে এনেছেন বলে জানান তিনি।

এছাড়াও দ্রুত সময়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। দুটি হটলাইন নং এর মাধ্যমে এ সেবা চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও যানজট নিরসনে শহরের প্রতিটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার জন্য স্কুল বাসের ব্যবস্থা করার বিষয়ে পরিকল্পনা নিয়েছি। আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্রুত বিষয়টি নিয়ে আলাপ করে ব্যবস্থা নেব।

একদিকে নানা সেবা থেকে বঞ্চিত নাগরিকদের অভিযোগের তীর দুই মেয়রের দিকে, এটাই স্বাভাবিক। মেয়ররা দাবি করলেই সার্বিক মূল্যায়নে সেবায় শতভাগ সন্তুষ্ট নন অনেকেই। কারো বক্তব্য কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না তারা। বাকি সময়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন হবে? এ নিয়ে সন্দেহ অনেকের।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার নাগরিকরা বলছেন, ডিএনসিসি মেয়র ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যার সমাধান করাসহ বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতিই এখনো আলোর মুখ দেখেনি। অন্যদিকে ডিএসসিসি মেয়র দক্ষিণ সিটি এলাকার উন্নয়ন নিয়ে অনান্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে দক্ষিণের মার্কেটগুলোর শৃঙ্খলা আর পুরান ঢাকাকে ঝুঁকিমুক্ত করার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না থাকায় নাগরিক অসন্তুষ্টি রয়েই গেছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নিয়ে এরই মধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী বেশ কিছু কাজ শুরু করেছেন তারা। এর মধ্যে খাল উদ্ধার ও সংস্কার এবং যানজট নিরসনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির মাধ্যমে নগর পরিবহণ ঢালু অন্যতম। নতুন সংযুক্ত ওয়ার্ডগুলো নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরিসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যানজট নিরসনে রাজধানীর বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের কাজও শুরু করা হয়েছে। তবে দুই মেয়রের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়নের চিত্রটা এক নয়।

মেয়র আতিকুল ইসলাম নির্বাচনের সময় সবাই মিলে, সবার ঢাকা স্লোগানে ৩৮টি প্রতিশ্রুতিসহ ইশতেহার দিয়েছিলেন। শিক্ষার্থী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা প্রবর্তন, বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ, হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান, আলাদা সাইকেল লেন এবং সাইকেল পার্কিং, এক্সেলেটরসহ নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ আধুনিক পশু জবাই কেন্দ্র স্থাপন, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমিনবাজারে আরআরএফ স্থাপনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য অপসারণ। বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনে এরই মধ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তবে এটি কবে নাগাদ আলোর মুখ দেখবে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।

তবে বেশ কিছু এলাকায় খেলার মাঠ ও পার্ক উন্নয়ন করা হয়েছে। অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। নাগরিক সমস্যা সমাধানে সবায় ঢাকা অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ অভিযোগের মধ্যে ১৫ হাজার অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য পাবলিক টয়লেট স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৩৪টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। গাবতলী সিটি পল্লীতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য চারটি ১৫তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলমান।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নির্বাচনী প্রচারণার সময় পাঁচটি রূপরেখা তুলে ধরে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা, সচল ঢাকা ও উন্নত ঢাকা। রূপরেখার আলোকে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার করে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গত দুই বছরে বেদখলে থাকা ৬৬ দশমিক ৩৩ একর জমি উদ্ধার করেছে ডিএসসিসি, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৫৫০ কোটি টাকার বেশি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের জন্য ৫১টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) আরো ১১টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।

নির্মাণ করা হয়েছে, যার মধ্যে গত ২ বছরে ২৬টি নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা শহরকে ঝুলন্ত তারের জঞ্জালমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখনো সফল হয়নি। মার্কেটগুলো দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। চারটি মার্কেটে উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালনা করা হয়। কিন্তু বাকিগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

মন্তব্য

Beta version