-->
দেশে মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ২৫,৫১,৩৮৫

ভাতা বাড়ানো কিছুটা সময় সাপেক্ষ: সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
ভাতা বাড়ানো কিছুটা সময় সাপেক্ষ: সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী
ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্রেইলকৃত কর্মপরিকল্পনা ও প্রজ্ঞাপনের মোড়ক উন্মোচন' অনুষ্ঠান

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী বলেছেন, আজকের সকল কিছুতে ভাতা দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধীদেরও প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়।

এই ভাতাটা আসলে তাদের জন্য কম হয়ে যায়। বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। আমরা ভাতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি তবে তা কিছুটা সময় সাপেক্ষ।

আমাদের এখনকার পরিকল্পনা প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাড়ানোর আগে, এখন যে ভাতা আছে তার আওতায় সকলকে আনা।

কারণ অনেকেই আছে ঠিকমত ভাতা পায় না। তাই কেউ যেন ভাতা থেকে বঞ্চিত না হয় সে দিকে আমরা জোর দিচ্ছি। আর এ বিষয়ে আমরা কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

আজ সোমবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্রেইলকৃত কর্মপরিকল্পনা ও প্রজ্ঞাপনের মোড়ক উন্মোচন' অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী নাজরানা ইয়াসমিন হীরা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (এনডিডি ও অটিজম) শবনম মুস্তারি, সমাজসেবা অধিদপ্তরের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক ও কর্মসূচির পরিচালক অদ্বৈত কুমার রায়।

আগত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে অভিব্যক্তি দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী আপিল বিভাগের অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন মজুমদার, ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ফাউন্ডার ট্রাস্টি মনসুর আহমেদ চৌধুরী, ইনোভেশন গ্যারেজ নামের আইটি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশিকুর রহমান আতিক, রূশাদা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শিরিন আক্তার প্রমূখ।

প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী তাদেরকে বলা হয়, যারা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে না। তাই বলে তারা পিছিয়ে নয়।

প্রতিবন্ধী মানুষ একজন স্বাভাবিক মানুষের থেকে কোনো অংশে কম নয়।

তিনি বলেন, যেকোনো কাজে প্রতিবন্ধীদের আগ্রহ বেশি থাকে। কারণ তারা মনে করে কাজটা করতে পারলে হয়তো অনেক সামনে এগোতে পারবে।

এজন্য তারা মনোযোগের সঙ্গে কাজটা করে। এ সময় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সমাজে অনেক স্থানে হেনস্থার শিকার হতে হয়।

এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেদের অবহেলিত মনে করেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর আলোকে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৯ একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় একটি কার্যকর পদক্ষেপ বলে মনে করছেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

এ কর্মপরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিকট কিছু সুপারিশ পেশ করে প্রতিষ্ঠানটি।

সুপারিশ গুলো হলো- ১. গৃহীত কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে সকল মন্ত্রণালয়কে ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা এবং কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখিত মূখ্য ও সহায়ক কর্তৃপক্ষকে তাদের দায়িত্ব পালনে (শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, তথ্যপ্রযুক্তি, গণপরিবহন ইত্যাদি) নির্দেশনা প্রদান করা।

২. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত কমিটি কার্যকর করা এবং নিয়মিত সভা আয়োজন করা।

৩. জাতীয় সমন্বয় কমিটি এবং নির্বাহী কমিটির সভায় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়মিত পর্যবেক্ষন করা এবং মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দায়িত্ব বন্টন করা।

৪. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর আলোকে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৯ এর বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় বাজেটে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দ রাখা।

উল্লেখ্য, সমাজসেবা অধিদপ্তরের চলমান জরিপ কার্যক্রম অনুযায়ী দেশে এখন পর্যন্ত মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ২৫,৫১,৩৮৫ যার মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ৩,৫১,৩০০ জন এবং শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ১০,৯২২ জন৷

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এ ১২ ধরণের প্রতিবন্ধিতা সনাক্ত করা হয়েছে।

১৯ ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাঝে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের চাহিদা এবং তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রচলিত ধারণার জন্য ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে।

প্রবেশগম্যতা এবং প্রয়োজনীয় সহায়ক উপকরণ পেলে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অন্য সবার মত শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করতে পারে৷

সাধারণ জনগনের মাঝে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সক্ষমতা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেখা যায়৷

ব্রেইল, স্ক্রীন রিডার ইত্যাদি বিকল্প পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় পরিবারে ও সমাজে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পড়াশোনার বিকল্প পদ্ধতি, শিক্ষাকেন্দ্র এবং সফল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করা হলে জনমনের ভ্রান্তি অনেকাংশে দূর করা সম্ভব।

মন্তব্য

Beta version