-->
শিরোনাম

মেয়র তাপসের দুই বছর: ভোগান্তি লাঘবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

নাজমুল হাসান রাজ
মেয়র তাপসের দুই বছর: ভোগান্তি লাঘবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব
রাজধানীর মাণ্ডা এলাকায় অবৈধ খাল উদ্ধার অভিযানে মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস

রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ অংশ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

এই দক্ষিণাংশের নগর পিতা হিসেবে ২০২০ সালের ১৬ মে দায়িত্ব পান ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস।

এরই মধ্যে মেয়র হিসেবে দুই বছর পার করেছেন তিনি। তার নির্বাচনী ইশতেহারে নগরবাসীকে দেখিয়েছিলেন উন্নত ঢাকা গড়ার স্বপ্ন।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় পাঁচটি রূপরেখা তুলে ধরে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা, সচল ঢাকা ও উন্নত ঢাকা’ গড়ার।

তাপসের এই প্রতিশ্রুতিতে উন্নত সেবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন নগরবাসী। কিন্তু এই সময়ে তিনি নগরবাসীর প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন?

তবে নগরবাসীর প্রত্যাশা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে না পারলেও জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সবসময় সতর্ক ঢাকা দক্ষিণের মেয়র।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দায়িত্ব নেয়ার পর গত দুই বছরে অবৈধ দখলদার থেকে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা মূল্যমানের ৬৬ দশমিক ৩৩ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের জন্য উন্নতমানের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করা হয়েছে।

মগবাজার মোড় হতে বেইলী রোড পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্তকরণ ও চৌরাস্তার উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গলি ১৪ ফুট হতে বাড়িয়ে ২০ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে এবং পান্থপথ মোড় হতে সোনারগাঁও রোড, বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির হতে কালিমন্দির রোড পর্যন্ত বিদ্যমান রাস্তা ৩০ ফুট প্রশস্তকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

৫টি নতুন পথচারী পারাপার সেতু নির্মাণ ও ২টি পথচারী পারাপার সেতু সংস্কার করা হয়েছে। ডিসিএনইউপি প্রকল্পের আওতায় শহীদ মতিউর পার্কের সংস্কার ও ল্যান্ডস্কেপিং করা হয়েছে।

৩টি উড়াল সেতুর নিচে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে।

যানজট নিরসন এবং যানবাহন চলাচলের গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেড়িবাঁধ সড়কের রায়ের বাজার স্লুইচ গেইট হতে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত সড়ককে ৬ লেনে প্রশস্তকরণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

চৌরাস্তাসহ সড়কসমূহের উন্নয়নে সমীক্ষা পরিচালনা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত স্থাপনের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো, জলাবদ্ধতা নিরসন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রণয়ন করা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ‘ঢাকা শহরের জন্য সমন্বিত মহাপরিকল্পনা, ২০২০-২০৫০’।

এই দুই বছর পূর্তিতে ব্যারিস্টার তাপস সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ডিএসসিসি এলাকার কার্যক্রমের সন্তুষ্টির বিষয়টি আমার ঢাকাবাসীর ওপরে ছেড়ে দিয়েছি।

মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রতিটি সমস্যা দ্রুত সমাধানে নগর কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছে। যানজট নিরসনের লক্ষ্যে নগর পরিবহণ চালুতে জনসম্পৃক্ততা ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে।

তিনি বলেন, ঢাকাবাসীর স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। খাল, জলাশয়, ফুটপাত, খেলার মাঠ, পার্ক দখলমুক্ত ও উদ্ধারে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

মেয়াদের বাকি সময়ে গড়ে তোলা হবে একটি আধুনিক উন্নত বাসযোগ্য নগরী।

তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার করে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিকায়নের লক্ষ্যে আমরা জাইকা প্রণীত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মাস্টারপ্লান অনুযায়ী ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মকাণ্ড, জলাবদ্ধতা নিরসনে ওয়াসার কাছ থেকে পাওয়া ১১টি মৃত প্রায় খাল, ২টি অচল পাম্প স্টেশন এবং জমাটবদ্ধ ময়লায় আবদ্ধ ৫টি অচল বক্স কালভার্টের পাম্প হাউজ দুটিকে আংশিকভাবে চালু, সাড়ে ২৭ কিমি দৈর্ঘ্যরে ২টি বক্স কালভার্ট, ৭টি খাল এবং ৭০০ কিমি দৈর্ঘ্যরে পাইপ নর্দমা হতে ৯ লক্ষ ৫৭ হাজার টন বর্জ্য ও পলি অপসারণ করা হয়েছে।

৩৭ কিমির অধিক দৈর্ঘ্যসম্পন্ন ১১টি খাল হতে এ পর্যন্ত আমরা ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার টন বর্জ্য ও পলি অপসারণ, গণপরিবহণে শৃঙ্খলা আনয়নের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম চালু, পার্কিং সুবিধার কথা মাথায় রেখে নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের খাল ও নদীর পাড় ঘিরে চার লেন পর্যন্ত প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

উন্নয়নের এই ধারা বৈশ্বিক মহামারি করোনায় বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অভিযাত্রায় ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত রাজধানী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সহিত মেয়র হিসেবে আমার ওপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব আমি পালন করে চলেছি।

আমি মনে করি, আমার ৫ বছর মেয়াদের মধ্যে প্রথম বছরে উন্নত ঢাকার সোপান পানে ১টি মজবুত ভিত্তি রচনা করতে সক্ষম হয়েছি।

দ্বিতীয় বছরে সেই ভিত যেমন শক্তিশালী হয়েছে তেমনি পেয়েছে নতুন মাত্রাও।

নগরপিতা যাই দাবি করুন না কেন, তার ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্নের অভাব নেই নগরবাসীর। সেবা বঞ্চিত নাগরিকদের অভিযোগের তীর তার দিকেই।

সাধারণ মানুষ বলছেন, সমস্যার শেষ নেই শহরজুড়ে। যানজট, মশার উপদ্রব, জলাবদ্ধতা, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, সড়ক বাড়ানো ও উন্নয়ন, খাল উদ্ধার নিয়ে ব্যর্থতা রয়েছে বহুলাংশে।

ঢাকা শহরকে ঝুলন্ত তারের জঞ্জালমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখনো সফল হয়নি। তেরোটি মার্কেটের মধ্যে চারটি মার্কেটে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালনা করা হয়।

কিন্তু বাকিগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এখনো বিশ্বে বায়ু, পানি ও শব্দ দূষণে ঢাকার অবস্থান প্রথম।

সড়ক-সড়কদ্বীপে অবৈধ দখলমুক্ত করা যায়নি।

 

মন্তব্য

Beta version