-->
শিরোনাম

চলছে ঢাকার খাল উদ্ধার, অপেক্ষা নৌকা চলার

# সুফল পাচ্ছে মানুষ # রামচন্দ্রপুরের পর লাউয়াতলা খাল দিয়ে নৌ চলাচল শুরু # ১০ মিনিটে মোহাম্মদপুর থেকে বুড়িগঙ্গা # চিহ্নিত ৫৮খাল

নাজমুল হাসান রাজ
চলছে ঢাকার খাল উদ্ধার, অপেক্ষা নৌকা চলার
ফাইল ফটো

বিশ্বের উন্নত শহরের আদলে যানজটমুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকায় বাস করা প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাসের উপযোগি শহর গড়ে তোলায় সংস্থা দুটির প্রশংসার বাইরেও শেষ নেই বদনামেরও।

ঢাকার চারপাশের বয়ে যাওয়া নদীগুলোই নগরবাসীর লাইফলাইন। পাশাপাশি খালগুলোর সেবা চালু হলে যানজটের মতো নিত্যদিনের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে বাধা থাকতো না। যানজট মুক্তি ও নির্মল বায়ু ফিরে পাবার লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসা খালগুলো দুই সিটি কর্পোরেশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

সংস্থা দুটির উভয় মেয়রের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিলো ঢাকার খালগুলো উদ্ধার করা। স্থায়ী বসতি, ইমারত নির্মাণ আর ক্ষমতাধর অবৈধ দখলদার থেকে উদ্ধার করে জনগণের সেবা পর্যন্ত পৌছানোর মতো চ্যালেঞ্জে অনেকটা প্রশংসিত হয়েছেন তারা। তবে উদ্ধার থেকে শুরু করে সেবা পর্যন্ত ধাপগুলো অতিক্রমে কেটে গেছে অনেক সময়। এবছর বর্ষায়ও পুরোপুরি সুবিধা নিয়ে রয়েছে নানা সংশংয়।

নগরবাসী পুরোপুরি সেবা পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সুত্র বলছে, নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে খালগুলো উদ্ধার করা গেলেও অতোটা সহজ ছিলোনা বলছেন অনেকেই। তবে উদ্ধার হওয়া খালগুলোতে আবারো পানির প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। ফলে এর সুবিধা পেতে শুরু করেছে রাজধানীবাসী। এরমধ্যে রামচন্দ্রপুর খালের পরে চালু হয়েছে লাউয়াতলা খাল। ইতোমধ্যে এই রুটে চলাচলকারীরা যাতায়াত বাড়াচ্ছে ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এ খালের চারপাশের লোকজনের সড়কের চলাচলে যানযট একটি অন্যতম সমস্যা তবে লাউতলা খালে পুরোপুরি নৌকা চলাচল শুরু হলে সেই পথে চলাচল হবে খুবই সাচ্ছন্দে আর নিরাপদে।

স্থানীয় আমজাদ হোসেন বলেন, সড়ক পথে যেতে যেখানে সময় লাগবে দুই ঘণ্টা, লাউতলা খালে পুরোপুরি নৌকা চলাচল শুরু হলে সেই পথে যেতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট।

আরিফ আহমেদের চাকরি করেন বাবু বাজার এক চাউলের আড়তে। তিনি প্রায়ই এই পথে যাতায়াত করেন। তবে বাসে যেতে তার দুই ঘন্টা ও চেয়ে কমবেশি সময় লাগলেও নৌ পথে যাতায়াত নিয়ে আলাপকালে তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর থেকে বুড়িগঙ্গা ১০ মিনিটে পার হয়েছি গত কয়েকদিনে ।

তিনি আরো বলেন, অসহনীয় যানজট ভোগান্তি থেকে এভাবে বাঁচাটা আসলেই ভাগ্যের ও পরম আনন্দের। আমার নিজের কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আমার মনে হয় পানির প্রবাহ টা আরো বেশি হলে আরো ভালো হবে । একদিকে যেমন কমবে জটের সমাধান অন্যদিকে টাকাও সাশ্রয় হবে। উত্তরের মেয়রের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু কথায় না মেয়র কাজেও সফল ।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ঢাকার চার পাশে বয়ে যাওয়া নদীর সাথে সংযুক্ত ২৯টি খালের বেদখল জায়গা থেকে বিনা নোটিশে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান দুই সিটি মেয়র। তবে দখল হয়ে যাওয়া নৌ পথ ফিরিয়ে আনতে পর্যাক্রমে ২৯টি খাল উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে মোট ৫৮টি খাল। ৩৭টি খালের ২৪৮ প্রভাবশালী ব্যক্তি ও অনেক অবৈধ স্থাপনার হাত থেকে মুক্ত করতে ক্ষমতা পেয়েছে সংস্থা দুটি। উদ্ধার পরবর্তী বাকি খাল গুলোর সীমানা জটিলতা আর আনুসঙ্গিক কাজের দোহাই দিয়ে খালগুলো সচল করতে বেশ সময় নিলেও রামচন্দ্র খালের সুবিধার পরে এবার লাউয়াতলা খালের সুবিধা পাচ্ছেন নগরবাসী।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, আগে ঢাকার খাল উদ্ধার করতে হবে এবং খালের চলাচল নিশ্চিতের মাধ্যমে জনগণকে সুবিধা দেওয়াই আমার লক্ষ্য। লাউয়াতলা খালের মাধ্যমে মোহাম্মদপুর থেকে নৌকায় যাওয়া যাবে বুড়িগঙ্গা নদীতে। ইতোমধ্যে লাইসেন্স দিয়ে নৌকার চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখান দিয়ে যাতায়াতের ফলে নগরবাসীর সময় বাঁচবে প্রায় দুই ঘণ্টা। পাশাপাশি খালের দুইপাড় দিয়ে সাইকেল লেন ও ওয়াকওয়ে করার পরিকল্পনা রয়েছে সামনে।

দুই মাস আগেও মোহম্মদপুরের লাউতলা খালটি ছিল ভাগার। উত্তর সিটি করপোরেশনের চেষ্টায় খালটিতে এখন শুরু হয়েছে পানির প্রবাহ। এই খাল রামচন্দ্রপুর খাল হয়ে মিলেছে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের সঙ্গে। শহরের চারদিকে যে চারটা নদী আর শহরের মাঝে যে খালগুলো আছে এগুলো যদি উদ্ধার করতে পারি তাহলে অসহনীয় যানজট থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি খালগুলোতে মাছ চাষের উদ্যোগ নেয়া হবে। সাইকেল লেন ও ওয়াকওয়ে করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান মেয়র। সেনাবাহিনীকে দিয়ে খালের সীমানা নির্ধারণ শেষে দ্রুত খালের উদ্ধার শুরু হবে।

এছাড়াও তিনি বলেন, লাউয়াতলা খালটির অবস্থান বছিলা এলাকায়। রামচন্দ্র খালটি বসিলা থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার উদ্ধার করে নৌ-চলাচলের উপযোগি করা হয়েছে। এই পথ তৈরী শেষে এ পথের যাত্রীরা ইতোমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে উদ্ধার করা রামচন্দ্র খাল দিয়ে চলছে নৌকা। এলাকাবাসী পারাপারে এখন এই খাল ব্যবহার করছে। প্রাথমিক ভাবে রামচন্দ্র খাল দিয়ে তৈরী হয়েছে ২৯ কিলোমিটার নৌ-সংযোগ পথ ।

নগর পরিকল্পনাবিদ এবং স্থপতি ইকবাল হাবিব মনে করেন, অবৈধ দখল হয়ে যাওয়া উদ্ধার করা কাজটি যদিও সহজ নয়। তবে সিটি করপোরেশনের মালিকানায় খালগুলো আসায় এর রক্ষাণাবেক্ষণ ভালো হবে। কিন্তু এ কাজে সফল হওয়ার জন্য, দীর্ঘমেয়াদি নগর পরিকল্পনা, সামাজিক ও প্রশাসনিক সক্ষমতা এবং সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন দীর্ঘ বছরে দখলে থাকা খালগুলোতে অবৈধ স্থাপনা ময়লা বর্জ্যসহ স্থানীয় লোকের লোলুপ দৃষ্টিতে আটকে যাওয়া খালগুলো হারিয়েছিলো স্বাভাবিক প্রবাহ।

মন্তব্য

Beta version