টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সাল এমডিজি বাস্তবায়ন ভালোভাবে হয়েছে। সেখানে আমাদের খাবার পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা শতভাগ কাভার হয়েছে।
এখন ২০১৬ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত এসডিজি বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। শুধু পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করলেই হবে না।
নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনও নিশ্চিত করতে হবে।
সোমবার (৩০ মে) বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসডিজি ৬ অর্জনে ওয়াশ খাতে বরাদ্দের ব্যবধান হ্রাসের প্রয়োজনীয়তা এবং সুষ্ঠু ও ন্যায্য বরাদ্দের কথা উল্লেখ করেন বক্তারা।
ওয়াটারএইডের সহযোগিতায় পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) ওয়াশ খাতে বাজেট বরাদ্দ বিশ্লেষণের তথ্যের আলোকে বক্তারা এ আহবান জানান।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশ, পিপিআরসি, ইউনসেফ বাংলাদেশ, ফানসা-বিডি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন), স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, এন্ড ওয়াটার পোভার্টি, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম, ইউনিসেফ এবং ওয়াশ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত বাজেট পূর্ব এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সঠিক এডিপি প্রকল্প নির্বাচনে মনোযোগী হওয়া এবং গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওয়াশ বিষয়ে বরাদ্দের ব্যবধান কমানোর প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা। ওয়াটারএইডের সহযোগিতায় পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) একটি বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এডিপি’র মোট বরাদ্দের (২৬৬,৭৯৩ কোটি টাকা) হিসাবে ২০২১-২২ অর্থ বছরের বরাদ্দে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ছিলো ৫.৪৪ শতাংশ (১৪,৫১৭ কোটি টাকা)।
বিশ্লেষণে আরো উঠে এসেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
এসব এলাকায় বরাদ্দ ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৫ বছর আগের তুলনায় ৭২ শতাংশ কমেছে।
বিশ্লেষণে ওয়াশ খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে ভৌগলিক বৈষম্যের বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে প্রত্যন্ত এলাকা, চর, পাহাড়ি ও উপকূলীয় অঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে সর্বোচ্চ শতাংশ তহবিল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অথচ অনুন্নত এসব এলাকায় বরাদ্দের প্রয়োজন শহরাঞ্চলের চেয়ে বেশি। তাই, আসন্ন বাজেটে প্রান্তিক একালাগুলোর প্রয়োজন বিবেচনা করা উচিৎ।
ওয়াশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মীদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পিপিআরসি’র চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, পিপিআরসি’র সিনিয়র ফেলো মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ বক্তব্য রাখেন।
ড. হোসেন জিল্লুর বলেন, আমাদের স্যানিটেশন সেইফলি ম্যানেজ করতে হবে।
সরকারের হিসাবে, আমরা ৫৯ শতাংশ নিরাপদ পানি নিশ্চিত করেছি। আর ৩৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের আর মাত্র ৮ বছর হাতে রয়েছে। এখানে নীতি সহায়তা এবং অর্থায়ন ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ওয়াসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে।
২০২১-২২ অর্থবছরে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ছিলো ৫.৪৪ শতাংশ, সেটি আরো বাড়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এখন শহরাঞ্চলকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, সেটি এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে হবে।
আরবানাইজ ভিলেজ বাস্তবায়নে আলাদা কাস্টমাইজ পলিসি নিতে হবে।
সেখানে অপরিকল্পিত হাউজিং গড়ে উঠছে। কিন্তু সেখানে সুপেয় পানি, নিরাপদ স্যানিটেশনের যথাযথ ব্যবস্থা থাকছে না।
বৃষ্টির সময় সেখানে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের জন্য বেশকিছু সুপারিশ উত্থাপন করা হয়।
সুপারিশগুলো হলো-
* এসডিজি ৬.১.১ এবং এসডিজি ৬.২.১ অর্জন নিশ্চিতে বরাদ্দ বাস্তবায়নে মানসিকতার পরিবর্তন এবং কার্যকর এডিপি প্রকল্প নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা।
* অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকায় বরাদ্দ বাড়ানো ও আন্তঃশহর বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা উচিৎ।
* ওয়াশ খাতে এডিপি বরাদ্দের আরো কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জের সমাধান করা।
* হাইজিনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য শুধুমাত্র বৈশ্বিক মহামারি নিয়ন্ত্রণেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে না; পাশাপাশি, কোভিড পরবর্তী বাস্তবতায় নগরে স্বাস্থ্য, স্কুলে স্বাস্থ্য ও নারীদের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
* যেসব এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ওয়াশের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে অ্যাকসেস বাড়ানো।
* শহরাঞ্চলে স্বাস্থ্যবিধি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ বাজেট বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করা।
মন্তব্য