-->

তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন সংস্কারের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন সংস্কারের দাবি
জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) আয়োজিত বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২২ উপলক্ষে 'তামাকমুক্ত পরিবেশ সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্যে সংবাদ সম্মেলন

পুরণো যে সব আইন, নীতি, অধ্যাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের সমস্যা সৃষ্টি করার মতো বিষয় সন্নিবেশিত রয়েছে সেগুলো সংস্কারের মাধ্যমে যুগপোযোগি করতে হবে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, 'তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন/নীতি সমূহের 'রক্ষাকবচ খ্যাত এফসিটিসি'র আর্টিকেল ৫.৩ অনুসারে তামাক কোম্পানির প্রভাব বন্ধে গাইডলাইন' প্রণয়নও অত্যন্ত জরুরি।'

আজ সোমবার (৩০ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) আয়োজিত বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২২ উপলক্ষে 'তামাকমুক্ত পরিবেশ সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্যে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ১টি অধিক তামাক ব্যবহারকারী জনগণের দেশ 'বাংলাদেশ'।

সুতরাং জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।

তামাক কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার সময় এসেছে।' মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক অরুপরতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগিত শিল্পি ফেরদৌস ওয়াহিদ, এইড ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট ডিরেক্টর সাগুফতা সুলতানা প্রমূখ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক অরুপরতন চৌধুরীর বলেন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষা এবং সার্বিক উন্নয়নে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো 'তামাক'।

এ কথা সর্ব মহলে স্বীকৃত। তামাক চাষাবাদ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবনসহ প্রতিটি ধাপেই পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

'গ্লোবাল এডাল্ট টোবাকো সার্ভে ২০১৭ তে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে ১৫ বছরের অধিক বয়সীদের মধ্যে ৩৫.৩% ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ মানুষ তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন।

২০০৯ সালে তামাকসেবী ছিলো ৪৩.৩%। সুতরাং তামাক সেবনের শতকরা হার নিম্নগামী হয়েছে, যা আশার কথা।

পক্ষান্তরে, এমন কিছু অসামঞ্জস্যতা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বিঘ্নতা সৃষ্টি করছে।'

তামাক চাষের ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, তামাক চাষে প্রচুর সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয় যা মাটি ও পানি দূষণ করে এবং মাছসহ জলাশয়ের উদ্ভিদচক্রের মারাত্মক ক্ষতি করে।

উদাহরণ হিসেবে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর কথা বলা যায়।

পাহাড়ের ধারে দীর্ঘদিন ধরে তামাক চাষের কারণে তামাকের নির্বাস ও চাষে ব্যবহৃত সার এবং রাসায়নিক মিশ্রিত পানি সরাসরি গিয়ে নদীতে পড়ায় হালদার পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

তা ছাড়া দেশে ৩১% বন নিধনের ক্ষেত্রে তামাক চাষ দায়ী। সুতরাং, তামাক চাষ ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তামাক চাষ সম্পূর্ণ বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ১৯৭০ সাল থেকে তামাকের কারণে বিশ্বব্যাপী (গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে) আনুমানিক ১.৫ বিলিয়ন হেক্টর বন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

যা ২০% বার্ষিক মিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বে বছরে ৩৫ লক্ষ হেক্টর জমি তামাক চাষে ধ্বংস হয়।

যা বৈশ্বিক ৫% বনাঞ্চল ধ্বংসের জন্য দায়ী। প্রায় ৯০% তামাক উৎপাদন হয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহে।

সংবাদ সম্মেলনে তামাক নিয়ন্ত্রণে কিছু সুপারিশ দেয়া হয়।

সুপারিশ সমূহ হচ্ছে-

১) কৃষি জমি ও পরিবেশ সুরক্ষায় দ্রুত 'তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি’ পাস করা। ২) কৃষকদের তামাকের বিকল্প ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি উদ্যোগ নিতে হবে।

৩) তামাক পাতা রপ্তানিতে ২৫% শুল্ক পূণরায় আরোপ করতে হবে। ৪) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র বৃক্ষরোপণে জাতীয় পদকের জন্য তামাক কোম্পানিকে অযোগ্য ঘোষণা করা।

৫) তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে তামাক কোম্পানির 'সিএসআর' কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা। ৬) 'জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়ন করা।

৭) বিএটিবি থেকে সরকারের ৯.৪৯% শেয়ার এবং কর্মকর্তা প্রত্যাহার করা। ৮) জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন আইন, নীতিতে তামাক কোম্পানির প্রভাব বন্ধে এফসিটিসির অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুসারে 'গাইডলাইন' প্রণয়ন করা।

৯) প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে 'রোডম্যাপ' চূড়ান্ত করা।

এ ছাড়া তামাক কোম্পানিগুলোর পরিবেশ সুরক্ষার দোহাই দিয়ে প্রবাহ, সামাজিক বনায়নের নামে লোক দেখানো নাটক বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন উপস্থিত আলোচকরা

মন্তব্য

Beta version