বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চাহিদার প্রতিফলন ঘটাতে হলে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা দরকার। প্রতিবন্দীদের অনুদান দিতে হবে এই মানিসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা।
পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা মাসিক বাজেটে জনপ্রতি ৮৫০ টাকা করা হয়েছে তা ন্যূনতম ২০০০ (দুই হাজার) টাকায় উন্নীত করার দাবি করা হয়।
প্রতিবন্ধীদের জন্য মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বাজেটসহ মন্ত্রণালয়গুলোতে প্রতিবন্ধীদের জন্য সমন্বয় বাড়ানো। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দের অবস্থা এবং সুপারিশ পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয় প্রতিবন্ধীদের ২০টি সংগঠনের পক্ষ থেকে।
আজ সোমবার (১৩ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে 'বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩: প্রতিবন্দী ব্যাক্তিদের অবস্থান' শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব দাবি করা হয়।
অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা এ আলোচনা উপস্থাপন করেন।
আলোচনা সভায় উইমেন উইথ ডিজএবিলিটি ডেভোলোপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিজেবল চাইল্ড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাসরিন জাহান, বাংলাদেশ সোসাইটি ফটো চেইঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব, এক্সেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন মহুয়া পাল প্রমূখ।
বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দের অবস্থা এবং সুপারিশ পুনর্বিবেচনার জন্য অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, ডিজএবিলিটি রাইটস ফান্ড এর সহযোগিতায় আরো ২০টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন-ডিসিএফ, এনসিডিডাব্লিউ, সীতাকুন্ড ফেডারেশন, টার্নিং পয়েন্ট, ডাব্লিউডিডিএফ, বি-স্ক্যান, ভিপস, এনজিডিও এসডিএসএল, নোয়াক, জয়িতা নারী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা, বিপিইউএস, ন্যাডপো জয়ের পথে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা, নরসিংদী ডিপিওড়ি, স্পন্দন প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা, প্রতীক মহিলা ও শিশু সংস্থা, ডিডাব্লিউএস, পরশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা, রংধনু জিলা প্রতিবন্ধী অধিকার সংস্থা এর পক্ষে এ প্রতিক্রিয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের জন্য করা বাজেট পুনর্বিবেচনার জন্য কিছু সুপারিশ করা হয় সেগুলো হলো-
১. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা মাসিক জনপ্রতি ন্যূনতম ২০০০ (দুই হাজার) টাকায় উন্নীত করা। অতি গুরুতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যেমন- সেরিব্রাল পালসি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, মানসিক প্রতিবন্ধী, ডাউন সিনড্রোম মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি যাদের সার্বক্ষণিক কেয়ারগিভারের প্রয়োজন হয় তাদের কেয়ারগিভারের জন্য ভাতা কার্যক্রম চালুর দাবি পুনর্বিবেচনা করা।
২. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষার আওতায় আনতে ও ঝরে পড়া রোধ করতে শতভাগ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপবৃত্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে উপকারভোগীর সংখ্যা বাজেটে কমপক্ষে দ্বিগুণ (২ লক্ষ) করার দাবি জানাচ্ছি। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যও আলাদা উপবৃত্তি চালু করা।
৩. সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে বেশ কিছু খাত আছে দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান কেন্দ্রিক। এ সকল কার্যক্রমের বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে একটি অংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানে ব্যয় করার দাবি জানাচ্ছি। নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে যে কর্মসূচী রয়েছে তার প্রত্যেকটিকে উপকারভোগী নির্বাচনে প্রতিবন্ধী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা প্রদান।
৪. শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে ভৌত অবকাঠামো ও তথ্যগত প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে বাজেট বরাদ্দের দাবি পুনর্বিবেচনা করা।
৫. সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী করা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে বাজেট বরাদ্দ করা।
৬. বাজেটে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কানে শোনার যন্ত্রে ব্যবহৃত ব্যাটারির ওপর শুল্ক কর হ্রাস এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষায়িত হুইলচেয়ার আমদানিতে VAT ও AIT সম্পূর্ণ বিলোপ করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আরো সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করে, যেমন- ট্রাই-সাইকেল, স্কুটার, সাদাছড়ি, হিয়ারিং এইড বহনযোগ্য র্যাম্প, কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও অঙ্গসহায়ক উপকরণ, স্পীচ টু টেক্সট, টেক্সট টু স্পীচ, এক্সেসিবল মোবাইল অ্যাপস্ কী-বোর্ড, লার্ভা প্রিন্ট ম্যাটেরিয়াল স্ক্রীন রিডিং সফটওয়ার ইত্যাদি।
এসকল উপকরণের উপরও শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করা।
৭. প্রতিবন্ধী মানুষের সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএস এর ওপর সকল প্রকার ভ্যাট-ট্যাক্স ও সার চার্জ প্রত্যাহার করা।
৮. প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য উপযোগী পাওয়ার র্যাম্প বা ম্যানুয়াল র্যাম্পযুক্ত বাস আমদানিতে এবং তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা।
৯. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।
১০. প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাজেটে যথাযথ বরাদ্দ রাখার দাবি জাননো হয়।
মন্তব্য