ঢাকা: সরকারি খাল উদ্ধারের নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ব্যক্তিমালিকানাধীন রেকর্ডীয় সম্পত্তি জবরদস্তি দখলের পাঁয়তারা করছে। এতে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হবার উপক্রম হয়েছে কামরাঙ্গীরচরের শত শত পরিবার। এর থেকে রক্ষা পেতে ভুক্তভোগীরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শনিবার (২২ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তারা এক মানববন্ধন করেন।
‘চর কামরাঙ্গীর মৌজার ভুক্তভোগী জনগণ’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক শামসুল হক দুররানী।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হাকিম, নূর মোহাম্মদ, হাজী আজিম, সুরজিত কুমার ঘোষ, অঞ্জনা, নিরানা সুলতানা, বাবুল মিয়া প্রমুখ।
মানববন্ধনে বেশ কয়েকজন কাফনের কাপড় পরে অংশ নেন।
মানববন্ধন শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে শতশত ক্ষতিগ্রস্তদের একটি বিক্ষোভ মিছিল জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে তোপখানা রোড ও আবদুল গনি রোড প্রদক্ষিণ করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে যান। সেখানে বিক্ষুব্ধরা অবস্থান নেন। বক্তৃতা করেন শামসুল হক দুররানী এবং হিরনা বেগম। বক্তারা আগামিকাল রোববার থেকে কাফনের কাপড় পরে বেরিবাঁধে লাগাতার মানবন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। কর্মসূচিতে অংশ নেন পূর্ব রসুলপুর ব্যাটারি গার্ড, রূপ নগর, বড় গ্রাম, নবাবগঞ্জ সেকশন ব্রিজ, কুড়ার ঘাট, কালু নগর এবং ঝাউলাহাটির ক্ষতিগ্রস্থ শতশত ভূমি মালিক।
বক্তারা বলেন, আদি বুড়িগঙ্গা খাল পুনরুদ্ধার করে এলাকার উন্নয়ন সকলে সমর্থন জানায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যার পর খালের সিংহভাগ দখল করেই বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। তাছাড়া অবৈধ দখলদাররা খাল বন্ধ করে ইচ্ছেমত দখল করে। এমনকি সরকারী প্রতিষ্ঠানও দখলদারের তালিকায় রয়েছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে খালে পানি প্রবাহের স্বাভাবিক পথ ফিরিয়ে আনতে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। অথচ একটি কুচক্রী মহল ব্যক্তিমালিকানাধীন বংশ পরম্পরায় ভোগদখলীয় সম্পত্তি জবরদখলের মাধ্যমে সরকারের সেই প্রশংসনীয় উদ্যোগকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে। বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জনবান্ধব প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা গৃহহীনদের আবাসনের ব্যবস্থা করছেন। অথচ কামরাঙ্গীর চরের বৈধ মালিকদের ক্ষতি পূরণ ছাড়াই বে-আইনীভাবে ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদের পায়তারা করা হচ্ছে।
তারা বলেন, খাল সংস্কারের নামে গত বছর ক্ষতিপূরণ ছাড়াই রেকর্ডীয় সম্পত্তি থেকে অনেককে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তখন বলা হয়, পরবর্তীতে যদি সিএসভুক্ত জমি সরকারের কাজে লাগে তাহলে তিন গুণ ক্ষতিপূরণ দিয়ে তা অধিগ্রহণ করা হবে। অথচ সেটি উপেক্ষা করেই ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সিএস, এসএ, আরএস এবং সর্বশেষ মহানগর জরিপে রেকর্ডকৃত সম্পত্তিতে উচ্ছেদের জন্য দাগ দিয়ে যাওয়ায় এলাকা জুড়ে আতংক ও হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে।
বক্তারা বলেন, ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে অনেকে রাজউক থেকে নকশা পাস করিয়ে বহুতল ভবন করেছেন। অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ এবং ধারদেনা করে মাথা গোজার ঠাঁই নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের স্বেচ্ছাচারিতায় সব হুমকির মুখে পড়েছে।
তারা বলেন, উন্নয়নের জন্য সরকার যেকোন স্থাপনা বা ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারে। তবে সে জন্য আইনানুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তারা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা অনতিবিলম্বে বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য