-->

মেট্রোরেলে প্রথম দিনের যাত্রা সফল, বলছেন ভ্রমণকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
মেট্রোরেলে প্রথম দিনের যাত্রা সফল, বলছেন ভ্রমণকারীরা

শেষ হয়েছে মেট্রোরেলের প্রথমদিনের যাত্রা। এই যাত্রায় শামিল হতে পেরে অনেকেই যেমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তেমনই মেট্রোরেলের স্টেশনের ওপরে উঠতে না পেরে নিচ থেকে হতাশ হয়ে ফিরে যান অনেক মানুষ। তবে সব মিলিয়ে মেট্রোরেলের প্রথমদিনের যাত্রাকে সফল বলছেন মেট্রোরেলে ভ্রমণ করা যাত্রীরা।

 

গত বুধবার উদ্বোধনের পর বৃহস্পতিবার সীমিত পরিসরে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল চালু রাখা হয়। তবে ভোর থেকেই প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে চড়ার অভিজ্ঞতা নিতে উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশনে জনসাধারণ ভিড় জমানো শুরু করেন। পরে সাড়ে ৮টার দিকে মেট্রোর গেট খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। ধাপে ধাপে প্রবেশ করানো হয় অপেক্ষমান যাত্রীদের।

 

যাত্রীরা ওপরে উঠেই টিকিট কাটার জন্য লাইনে দাঁড়ান। মেট্রোরেলে গতানুগতিক ও স্বয়ংক্রিয় দুই পদ্ধতিতে টিকিট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সফটওয়ার আপডেট সংক্রান্ত কারণে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টিকিট কাটা যাচ্ছে না বলে জানান উপস্থিত স্কাউট সদস্য। তাই গতানুগতিকভাবে হাতে হাতেই টিকিট কাটছিলেন যাত্রীরা।

 

একসঙ্গে অনেক যাত্রীর টিকিট কাটতে গিয়ে কিছুটা দেরি হচ্ছিল বলে অভিযোগ করেন টিকিটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের অনেকে। তবে টিকিট অর্থাৎ এমআরটি পাস কার্ডটি পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন সবাই। টিকিট কাটা থেকে শুরু করে রেলের বগিতে প্রবেশ করানো পর্যন্ত প্রত্যেক ধাপেই সবকিছু বুঝিয়ে দিতে সহয়তা করছিলেন আনসার বাহিনীর সদস্যরাসহ মেট্রো কতৃপক্ষের লোকজন।

 

মেট্রোরেলে চড়া যাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে তার জানান মেট্রোরেলের চড়ার নিয়মগুলো কঠিন মনে হলেও জানতে পারলে আসলে সবকিছুই একেবারে সহজ। খলিল নামে এক যাত্রী টিকিট (এমআরটি পাস) নেওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘ এসম্পর্কে আগে কোনও ধারনা ছিল না। ভেবেছিলাম কঠিন কিছু। এখন মনে হচ্ছে জানলে খুবই সহজ।’

 

তবে যত যাত্রীর মেট্রোরেলে উঠার সৌভাগ্য হয়েছে তার চায়ে বেশি মানুষ মেট্রোরেলে উঠতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। তাদের অনেকেরই জানা ছিল না ১২টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করবে। মেট্রোরেলে চড়তে না পারার আক্ষেপের কথা জানাতে গিয়ে মিরপুর থেকে আসা শিক্ষার্থী সুমন বলেন, ‘গেট ছুঁয়ে চলে গেলাম, মেট্রোতে আর উঠা হলো না।’ বাড়ি কাছে হওয়াই হয়তো পরে আবারও চড়া হবে কিন্তু প্রথমদিনে চড়ার আনন্দ আর পাওয়া যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাড়িটা খুবই কাছে কিন্তু আনন্দটা অনেক দূরে রয়ে গেলো।’

 

মেট্রোরেলের ধীর গতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিচে অপেক্ষায় থাকা অনেক যাত্রী। তারা দাবি জানান, মেট্রোরেলের চলাচল ১২টা পর্যন্ত না রেখে আরও ঘণ্টা দুয়েক বেশি রাখা দরকার। এ বিষয়ে স্বর্নালী ঘোষ বলেন, ‘মেট্রোরেলের সার্ভিসের গতি অনেক ¯েøা ছিল। আর ১২টা খুবই অল্প সময়। সময় আরও বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি।’

 

মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশনে যাত্রীদের টিকিট কাটা ও রিচার্জ করার মেশিন তিনটিই বন্ধ। ফলে প্রথম দিনই যাত্রীরা পড়ছেন ভোগান্তিতে। রাস্তায় বিশাল লাইন পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই হতাশ হন অনেকে। মেশিন বন্ধ থাকায় হাতে কেটে টিকিট বা পাস দেওয়া হয়। সেখানেও আবার লাইনে দাঁড়াতে হয় যাত্রীদের। মেট্রোরেল স্টেশনের পাশেই থাকার কথা ছিল বিআরটিসির বাসের।

 

মেট্রোর যাত্রীদের জন্য উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকা থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশন এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল নিয়ে যাওয়ার জন্য থাকার কথা বিআরটিসির ৫০টি বাস। তবে সাধারণ যাত্রীদের জন্য মেট্রোরেল খুলে দেওয়ার প্রথম দিন উত্তরা স্টেশনে কোনও বাসের দেখা মেলেনি। লেগুনা, অটোরিকশাই ভরসা উত্তরা হাউস বিল্ডিং থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশনের যাত্রীদের।

 

তবে স্টেশনে এক কিলোমিটার অপেক্ষায় থাকলেও ট্রেনে ভেতরে ছিল অনেক ফাঁকা । রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে প্রতিদিন সকাল সকালই পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনের লাইন পড়ে যায়। গতকাল সকালে মেট্রোরেলে উঠতে আগ্রহী মানুষের লাইন ছাড়িয়েছে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সীমাও।

 

আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনের মূল ফটক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইনে শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রথমবারের মত মেট্রোর ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য। এই লাইনে তরুণদের ভিড় বেশি। অনেক অভিভাবক শিশুদেরও নিয়ে এসেছেন। ছিলেন জ্যেষ্ঠ নাগরিকেরাও। বাইরে দীর্ঘ লাইন থাকলেও ট্রেনের বগিগুলোতে যাত্রী তুলনমূলক কম, সেগুলো প্রায় ফাঁকা যাওয়া আসা করছে।

 

উত্তরা উত্তর স্টেশনে নেমে দেখা গেছে, সেখানেই বাইরে দীর্ঘ লাইন এক কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলো শীতের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। তবে তাদের মুখে ছিল খুশির আনন্দ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version