-->
শিরোনাম

পানির তরঙ্গ মেপে তৈরি হবে চট্টগ্রাম ওয়াসার বিল, পরিশোধ করা যাবে মোবাইলে

চট্টগ্রাম ব্যুরো
পানির তরঙ্গ মেপে তৈরি হবে চট্টগ্রাম ওয়াসার বিল, পরিশোধ করা যাবে মোবাইলে

গতানুগতিক বিল প্রণয়নের ধারা থেকে বের হয়ে আসছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। বিল তৈরি থেকে শুরু করে গ্রাহকের কাছে পাঠানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে প্রযুক্তি। যেটি নতুন বছরের ফেব্রুয়ারির দিকে প্রচলন করতে যাচ্ছে সারা বছর সিস্টেম লসে ডুবে থাকা ওয়াসা।

 

চট্টগ্রাম ওয়াসার লাগানো আল্ট্রাসনিক ডিজিটাল মিটারের মাধ্যমে পানির শব্দ তরঙ্গ থেকে হিসাব করে তৈরি হবে বিল। মাসের ৩০ তারিখের পর ব্যবহারের সম পরিমাণ পানির বিল পৌঁছে যাবে গ্রাহকের কাছে; আবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক ঘরে বসেই জমা দিতে পারবে সেই বিল।

 

জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত ৮১ হাজার সংযোগের বিল তৈরি করছেন ৪২ জন মিটার পরিদর্শক। ফলে বছর শেষে মোট পানির ব্যবহারের সঠিক হিসাব থাকেনা ওয়াসার হাতে। সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ এমআইএস প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে মোট উৎপাদিত পানির ৩০ শতাংশ সিস্টেম লস বা নন-রেভেনিউ ওয়াটার। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার তিনটি প্রকল্প ও গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে দৈনিক গড়ে পানি উৎপাদিত হয় প্রায় ৪৫ কোটি লিটার। এর মধ্যে শেখ রাসেল পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে দৈনিক ৯০ মিলিয়ন লিটার, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে ১৪৩ মিলিয়ন লিটার, মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে ৯০ মিলিয়ন লিটার পানি উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং ৪৩টি গভীর নলকূপ থেকে ৬৮ মিলিয়ন এবং ৩৭ মিলিয়ন লিটার পানি উৎপাদিত হয়। গত নভেম্বর মাসে, মোট উৎপাদিত পানির ২৮ শতাংশ সিস্টেম লস বা নন-রেভেনিউ ওয়াটার।

 

মূলত সিস্টেম লস পানির পরিমাণ শূণ্যের কোঠায় নিয়ে আসতেই নেয়া হয়েছে ডিজিটাল মিটার প্রকল্প। আল্ট্রাসনিক ডিজিটাল মিটারে থাকবে পানির শব্দ তরঙ্গ থেকে মোট পানি ব্যবহারের হিসাব ব্যবস্থা। যেখানে আগের মিটারে থাকা টারবাইনের মাধ্যমে নেয়া হতো হিসাব। ফলে গ্রাহক ও মিটার পরিদর্শকরা অসাধু ওপায়ে মিটারে থাকা টারবাইন উল্টো ঘুরিয়ে কমাতো পানির মোট ব্যবহারের হিসাব। এবার ডিজিটাল মিটার কেউ খুলতে চাইলে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাবে সর্তক সংকেত। আগামী বছরের মে মাসে বসানো হবে ৩ হাজার ডিজিটাল মিটার।

 

চট্টগ্রাম ওয়াসার সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী শফিকুল বাসার ভোরের আকাশকে বলেন, ‘প্রতি মাসের পানির বিলের ক্ষেত্রে সার্বিক ব্যবস্থাটি অনেক পুরোনো। ডিজিটাল মেশিন মিটার রিডার স্থাপনের ফলে কেন্দ্রীয়ভাবে বিল করা সম্ভব হবে। আগে মিটারে চট্টগ্রাম ওয়াসার মিটার পরিদর্শকের প্রশ্রয়ে গ্রাহক মিটার খুলে পানির বিল কমাতো। তাছাড়া অনেক গ্রাহক পানি নেয়ার সময় খুলে রাখতো পানির মিটার। তবে এবার ডিজিটাল মিটার একবার বসানো হয়ে গেলে গ্রাহক ও মিটার পরিদর্শকের ইচ্ছেমতো পানির মিটার খুলতে পারবে না। কর্তৃপক্ষের অগোচরে কেউ মিটার খুলতে চাইলে মিটার লক হয়ে যাবে এবং পানির সংযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া গ্রাহক এইরকম অপরাধ বার বার করলে ওয়াসা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

জানা যায়, প্রথমদিকে ৩ হাজার আল্ট্রাসনিক ডিজিটাল মিটার বসানোর জন্য গ্রাহক থেকে নেয়া হচ্ছে না কোনো প্রকার খরচ ও মিটারের দাম। তবে পাইলট প্রকল্প সফল হলে নির্ধারণ করা হবে মিটারের দাম। যা প্রতি মাসে ওয়াসার বিল থেকে কেটে নেয়া হবে নিদির্ষ্ট পরিমাণ টাকা। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ডিজিটাল মিটার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ইউরোপীয় দেশ লিথুনিয়া এক্সিওমা নামের ডিজিটাল মিটার প্রস্তুতকারক কোম্পানি থেকে রপ্তানি করা হচ্ছে ৩ হাজার আল্ট্রাসনিক ডিজিটাল মিটার। এদিকে বিদেশ থেকে রপ্তানি ও মিটার বসানোসহ মিটার ব্যবস্থাপনায় কাজ করবে দেশীয় কোম্পানি পদ্মা টেকনলজি। এজন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার সঙ্গে পদ্মা টেকনলজির সঙ্গে ৫ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়েছে। পাইলট প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

 

একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ডিজিটাল মিটার চালু হলে বিলিং পদ্ধতিতে অবৈধ রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম ওয়াসার কিছু দুর্নীতিবাজদের কারণে প্রতি মাসে সিস্টেম লসের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বছর শেষে চট্টগ্রাম ওয়াসা হাজার কোটি টাকা লস গুনতে হয়। আগামী বছরের পাইলট প্রকল্প সফল হলে চট্টগ্রামের আবাসিক-অনাবাসিক, অফিস-কারখানা ওয়াসার পানির সংযোগে ডিজিটাল মিটারের আওয়ায় নিয়ে আসা হবে।’

 

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে অটোমেশনের যাওয়ার চিন্তা করেছিল ওয়াসা। সেই হিসেবে অ্যানালগ ও ডিজিটাল দুটি ডিভাইস সংযুক্ত করার পরিকল্পনা সাজানো হয়। তবে ক্যাবল কাটা পড়ার বিষয়টি মাথায় এনে বিলিং সিস্টেম পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ডিজাইল ডিভাইসের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। এরপর ২০২০ সালের শুরুতে নগরের লালখান বাজার ও হাইলেভেল রোড ও বাঘঘোনায় বসানো হয় পরীক্ষামূলক মিটার। ওই বছরের মিটার কার্যকারিতায় সফলতা পেয়ে পাইলট প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রাথমিক ব্যয় ধরে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত দরপত্র সংগ্রহ করে সংস্থাটি।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version