ঈদ এলেই ট্রেনের টিকিটের জন্য সারারাত জেগে রেলস্টেশনে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার চিরচেনা রূপ আর নেই। ট্রেনের শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্তেই রেলস্টেশনের কয়েক দশকের চিরচেনা সেই চিত্র পাল্টে গেছে এবার।
শুক্রবার তার প্রতিফলন দেখা গেছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে থেকে বাস-ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে কমলাপুরে ছিল না কোনো টিকিট কাটার দীর্ঘ লাইন। ফলে টিকিট কাটা যাত্রীদের দুর্ভোগের খবর চোখে পড়েনি। তবে কিছু মানুষ আছেন, যারা অনলাইনে টিকিট দেয়ার বিষয়টি জানেন না, তারা কমলাপুর স্টেশনে এসে ঘুরে গেছেন।
ঈদে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার জন্য মোট ২৫ হাজার ৭৭৮টি আসনের টিকিট ছাড়া হবে। এর সবগুলোই বিক্রি হবে অনলাইনে।
ঈদযাত্রায় আগামী ১৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট মিলেছে। পর্যায়ক্রমে ১৮ এপ্রিলের টিকিট ৮ এপ্রিল, ১৯ এপ্রিলের টিকিট ৯ এপ্রিল, ২০ এপ্রিলের টিকিট ১০ এপ্রিল এবং ২১ এপ্রিলের টিকিট পাওয়া যাবে ১১ এপ্রিল। সকাল ৮টা থেকে অনলাইনেই বিক্রি হয়েছে ১৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট। যাত্রা শুরুর ১০ দিন আগের ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে আজ। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেটিং ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায়, অধিকাংশ রুটের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ।
বিশেষ করে যেসব রুটে টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। যাত্রীদের অভিযোগ, বিক্রি শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব টিকিট শেষ। বিশেষ করে রংপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গগামী সব ট্রেনের টিকিট বিক্রি নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।
ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চারটি ট্রেনের কোনোটিতেই কোনো টিকিট নেই। একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকা থেকে রংপুরগামী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে। ১৭ তারিখে ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের চিত্রও ভিন্ন ছিল না। তবে যেসব রুটে বরাবরই চাপ কম থাকে, সেসব রুটে টিকিট মিলছে বেশ পরেও। সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেটের সব ট্রেনেই টিকিট পাওয়া গেছে। ঢাকা-খুলনা রুটেও কিছু সিট খালি দেখা গেছে।
অন্যদিকে বাসের টিকিটও বিক্রি শুরু হয়েছে। বেসরকারি বাস অপারেটরগুলো অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। এক্ষেত্রে বাসের টিকিটের জন্য গাবতলী, শ্যামলী, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে লম্বা লাইন চোখে পড়েছে।
বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত। ঈদে ফেরত যাত্রার টিকিট বিক্রি করা হবে ১৫ এপ্রিল থেকে। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে বিশেষ সেবা চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিশেষ সেবার বাস চলবে।
আগামী রোববার থেকে সংশ্লিষ্ট ডিপোতে বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। রাজধানীর মতিঝিল, জোয়ারসাহারা, কল্যাণপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপো (চাষাঢ়া) থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে।
ঈদের ১০ বিশেষ ট্রেন: আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্থে ১০ জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে রেলওয়ে। ট্রেনগুলো হলো-চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল-১ ও ৩, চাঁদপুর-চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল-২ ও ৪, ঢাকা- দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল-৬, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটে ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল, সিলেট-চাঁদপুর-সিলেট রুটে ঈদ স্পেশাল-১০, ঢাকা-চিলাহাটি-ঢাকা রুটে ঈদ স্পেশাল ১৪ ও ১৫, পঞ্চগড় রুটে ঈদ স্পেশাল-১ ও ২।
আর উত্তরবঙ্গের পোশাক শ্রমিকদের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশন থেকে পঞ্চগড়ে যাবে বিশেষ আরেকটি ট্রেন। অন্যদিকে শুধু শোলাকিয়ায় ঈদের জামায়াতের যাত্রীদের জন্যে ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল-১১ ও শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল-১২ এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল-১৩ ও ১৪ চলবে।
প্রথমবারের মতো এবার ঈদে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ঈদের সময় কমলাপুরের যে পরিবেশ তৈরি হয়, এটা রেলের জন্য খুবই বিব্রতকর। মানুষ দুই দিন কমলাপুরে থেকেও টিকিট পায় না। সব মানুষ টিকিট পাবে না। ঈদের সময় আমাদের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায়।
তাই অনলাইনে শতভাগ টিকিট দেয়া হবে। কমলাপুরে গিয়ে টিকিটের জন্য যাত্রীদের যেন ঘুরতে না হয় এবং তারা যেন বাসায় বসে টিকিট কাটতে পারে সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবার যদি কোনো ভুল-ত্রুটি হয় তবে সেটি আগামী ঈদে সংশোধন করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য