রাজধানীর পুলিশের ‘উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন’ কার্যালয়ের ছাদে দৃষ্টিনন্দন বাগান সৃজন করে বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা হামিদা পারভীন পিপিএম। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে এ পদক তুলে দেবেন। বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০২১ এর জন্য তিনি তার সৃজিত ছাদবাগানের সচিত্র তথ্য দিয়ে আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধাপে যাচাই-বাছাই, বন বিভাগের বিভিন্ন কমিটি পর্যায়ক্রম সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০২১ এর ঙ-শ্রেণিতে বাড়ির ছাদে বাগান সৃজন (ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান) ক্যাটাগরিতে হামিদা পারভীনের সৃজিত ‘উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন’ কার্যালেয়র ছাদবাগান প্রথম স্থান অর্জন করে।
হামিদা পারভীন জানান, তার সৃজিত ছাদবাগান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী গৃহিণীদের পরিদর্শনের ব্যবস্থা করে তাদের ছাদবাগান করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তার বৈচিত্র্যময় ছাদবাগান সম্পর্কে ইতোপূর্বে বিভিন্ন টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী স্বনির্ভর কৃষি নিশ্চিতে এক ইঞ্চি জমিও পতিত কিংবা অনাবাদি রাখা যাবে না মর্মে অনুশাসন দিয়েছেন। এ অনুশাসন বাস্তবায়নে হামিদা পারভীন উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন কার্যালয়ের ছাদে বিভিন্ন ধরনের ফলদ, বনজ , শাকসবজি ও ফুলগাছ রোপণের পদক্ষেপ নেন। সাড়ে ৭ হাজার স্কয়ার ফুটের অফিস ভবনের প্রায় ৫ হাজার স্কয়ার ফুটের ছাদে ১ হাজার ২০টি বিভিন্ন সাইজের টব এবং ড্রাম দিয়ে, বীজতলা তৈরি করে, ছাদের কার্ণিশে গাছ লাগিয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ছোট্ট একটা সবুজ অরণ্য সৃজন করেছেন। ছাদে রোপণ করেছেন ১২ প্রজাতির বনজ, ৪৮ প্রজাতির ফলদ, ৩০ প্রকার ভেষজ, ৭৭ প্রজিতির শোভাবর্ধনকারী, ১৫ প্রজাতির দেশীয় বিলুপ্তপ্রায়, ২১ প্রজাতির সবজি ও অন্যান্য, ১২ প্রজাতির বিরল বিভিন্ন মসলা এবং ঔষধি গাছ। তিনি ছাদেই বীজতলা তৈরি করতেন। বীজতলার সেই চারা দিয়েই বিভিন্ন শাকসবজির ফলন ফলাতেন।
তিনি নিজে জৈবসার তৈরি করে বিষমুক্ত নিরাপদ শাকসবজি চাষ করেছেন। ছুটি এবং অবসর সময়ে ছাদে কাজ করেছেন, গাছের যত্ন করেছেন। ছাদবাগানের বিভিন্ন গাছে পাখির আশ্রয়স্থল স্থাপন, কৃত্রিম ঝর্ণা স্থাপন, ছোট্ট একটা চৌবাচ্চায় পদ্ম পাতা দিয়ে শোভিত করে মাছ চাষ, দৃষ্টিনন্দন মাচায় দেশীয় সবজি চাষ তার সৃজিত ছাদবাগানকে বৈচিত্র্যময় এবং দৃষ্টিনন্দন করেছে। প্রতিদিন তিনি ছাদে নতুন নতুন গাছ সংযোজন করেছেন। পাশাপাশি বছরব্যাপী টাটকা শাকসবজি, মৌসুমি ফল, ঔষধি-মসলা জাতীয় গাছ আর অসংখ্য বাহারি ফুলের সমারোহ ওই ডিভিশনের পুলিশের সব সদস্যদের যেমন অফুরন্ত আনন্দ দিয়েছে, তেমনি সাধারণ দর্শনার্থীদেরও। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ছাদবাগানে বৈচিত্র্যময় বাগান সৃজন করে স্বনির্ভর কৃষি তথা স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মানে স্বীয় অঙ্গীকার অটুট রেখে তিনি তার বতর্মান কর্মস্থলের পতিত এবং অব্যবহৃত জমিতে শুরু করেছেন বৃক্ষরোপণ অভিযান। সবুজে ভরা গ্রামবাংলায় বেড়ে ওঠা প্রকৃতিপ্রেমী এ কর্মকর্তা শৈশব থেকে অদ্যাবধি একান্ত নিজস্ব ভাবনা, গাছের প্রতি মমতা, ভালোবাসা আর প্রচেষ্টায় টুকরো টুকরো ফাঁকা জায়গায়ও ছোট পরিসরে বাগান করেছেন। তার চাকরি জীবনের প্রতিটি কর্মস্থলে তিনি মনের মাধুরী মিশিয়ে অগণিত ফুল-ফলের টব দিয়ে বারান্দা-ব্যালকনি-ছাদকে এক টুকরো অরণ্য বানিয়ে যান্ত্রিক জীবনে স্নিগ্ধতা আনার পাশাপাশি চাকরির স্ট্রেস ম্যানেজ করেছেন। পুলিশের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় থেকেও বাংলাদেশ পুলিশের জন্য জাতীয় পুরস্কার অর্জনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব তার।
উল্লেখ্য, বর্তমানে হামিদা পারভীন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার প্রোটেকশন অ্যান্ড ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটির দায়িত্ব পালন করছেন। এ পদে পদায়নের পূর্বে দীর্ঘদিন (২০১৯-২২ পর্যন্ত) দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে। ২০১৯ সালে তিনি উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপপুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব নিয়েই ডিভিশনের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, তদন্ত ইউনিট এবং কুইক রেসপন্স টিমের কার্যক্রমে আধুনিক ও মানবিক পুলিশিংয়ের সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানকে নির্যাতিতদের ভরসাস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনি স্কুল-কলেজ, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনার মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম, মাদক, বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যাপক পরিসরে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। শিশু ও বয়স্ক ভিকটিমদের জন্য ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারকে তিনি আনন্দাশ্রমে রূপান্তরিত করেছিলেন। ওই ডিভিশনে প্রশংসনীয় এসব ভূমিকা রাখার পুরস্কারস্বরূপ তাকে তৃতীয়বারের জন্য ‘ওএচ'ং ঊীধসঢ়ষধৎু এড়ড়ফ ঝবৎারপবং ইধফমব’ প্রদান করা হয়।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য