-->
শিরোনাম

‘দীপ্ত শপথ’ ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে হিযবুত তাহরীরের পোস্টার

গোলাম মুজতবা ধ্রুব
‘দীপ্ত শপথ’ ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে হিযবুত তাহরীরের পোস্টার

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ গুঁড়িয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পোস্টার লাগানো হয়েছে। সরকার পতনের দিন ঘটনাটি ঘটলেও ভবিষ্যতে আবারও ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে কিনা জানাতে পারেনি পুলিশ।

গুলশান থানার ওসি তৌহিদ আহমেদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভোরের আকাশকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন ঘটনাটি ঘটেছে। ভবিষ্যতে সেই ভাস্কর্য পুনরায় মেরামত করা হবে কিনা সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত রয়েছে কিনা, সেটা জানি না।

বাধন মুন্সী নামে একজন নিজের ফেসবুক পেজে লিখেন,‘ হোলি আর্টিজানে নিহত পুলিশ অফিসার স্মরণে গুলশানে নির্মিত মনুমেন্ট ভেঙে নিষিদ্ধ ‘জঙ্গি সংগঠন’ হিযবুত তাহরীর তাদের পোস্টার লাগিয়েছে।’ সবশেষ বৃহস্পতিবার সকালে রাতে দেখা যায়, ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ যেখানে ছিল সেখানে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। পাশেই হিযবুতের পোস্টার লাগানো রয়েছে।

হলি আর্টিজান হামলায় নিহত ঢাকা মহানগর পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিমের ছোট ভাই সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস বৃহস্পতির বিকেলে বলেন, দুপুরে গুলশানে গিয়ে দেখি, আমার ভাইয়ের ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাশেই লাগানো রয়েছে হিযবুত তাহরীরের পোস্টার।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে একদল উগ্রবাদী সশস্ত্র তরুণ রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বরে হোলি আর্টিজান বেকারি নামে একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া মানুষদের জিম্মি করে। রোজার মাসে বিদেশিদের পছন্দের জায়গাকেই নিজেদের অবস্থান জানান দিতে ওইদিন বেছে নেয় জঙ্গিরা। পাঁচ তরুণের ওই দলটি সশস্ত্র অবস্থায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে পড়ে। গুলি চালিয়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানের, একজন ভারতীয়, দুজন বাংলাদেশি, একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক ছিলেন। এর বাইরে হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

২০১৮ সালে নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের স্মরণে পুরাতন গুলশান থানার সামনে ‘দীপ্ত শপথ’ নামে একটি ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন তৎকালীন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রকাশ্যে চলে আসে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর। হোলি আর্টিজান বেকারির সামনে স্থাপন করা ভাস্কর্য ভাঙার পর নিষিদ্ধ সংগঠনটির পোস্টার সাঁটানো হয়।

গত ৫ আগস্ট প্রবল গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই দেশে ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চোখে পড়ছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় অনেক ভাস্কর্যও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সেদিন থেকেই নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর প্রকাশ্যে মিছিল করা শুরু করেছে। গত ১০ আগস্ট জুমার নামাজের পর সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল করে। এরপর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করে তারা।

২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সে সময় সরকারের তরফে বলা হয়, ‘এ সংগঠনটির কার্যক্রম দেশে জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।’ হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলে সক্রিয় হয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। বিশ্বের পাশাপাশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বেশ কিছু দেশেও উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগে এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version