সকাল থেকে বিভিন্ন পাম্পে ঘুরে কোথাও তেল পাচ্ছিলেন না মো. আজাদ। হঠাৎ করেই তার বাইক বন্ধ হয়ে যায়। বনানী থেকে বাইক ঠেলে তেলের সন্ধানে মহাখালীর আমতলী যান তিনি। আজাদ বলেন, সকাল থেকে ঘুরে ঘুরেও কোথাও তেল পাচ্ছিলাম না। তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে এই পাম্পে আনলাম। এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে ভাবিনি। যেখানেই যাই বলে তেল নাই।
বাইক রাইড শেয়ার করেন শামিম আহমেদ। তিনি তেজগাঁও ও মহাখালীর পাঁচটি পেট্রোল পাম্প ঘুরেও তেল পাননি। বললেন, কয়েক ঘণ্টা ধরে কোথাও তেল পাচ্ছি না। রিজার্ভে চলতেছি এখন। কখন যেন বন্ধ হয়ে যায় সেই আতঙ্কে আছি।
রোববার সকাল থেকে আজাদ ও শামিমের মত বিড়ম্বনায় পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। তারা অভিযোগ করছেন, তেলের দাম কমবে খবর পেয়ে অনেক পাম্প আগের দামে তেল নেয়নি। নতুন দামে তেল নিয়ে বিক্রি করতে করতে তারা দুপুর পর্যন্ত সময় গড়িয়েছে। তবে কোনো কোনো পাম্প কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত শুক্রবার ও শনিবার সরবরাহ বন্ধ থাকায় তেল শেষ হয়ে গিয়েছিল পাম্পে, তাই বিক্রি করা যাচ্ছিল না।
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে সেপ্টেম্বরের জন্য জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাতে পেট্রোল ও অকটেনের দাম লিটারে ৬ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১ টাকা ২৫ পয়সা করে কমানো হয়েছে। মহাখালীর ক্রিসেন্ট অটোমোবাইলস লিমিটেড পেট্রোল পাম্পে গতকাল রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত অকটেন দেওয়া হলেও এরপর থেকে দুপুর প্রায় ২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়। এই সময়টাতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায় তেল নিতে আসা বিভিন্ন গাড়ি চালকদের।
তেল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আহমেদ শরীফ বলেন, আমি মহাখালীর কয়েকটা পাম্পে দুপুর ১২টার দিকে তেল নেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোনো পাম্পেই তেল দিল না। পরে রিজার্ভে রেখেই উত্তরা যাচ্ছি। রাস্তায় বাইক বন্ধ হয়ে যায় কিনা চিন্তায় আছি। এটা মারাত্মক একটা ভোগান্তি।
তেল না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ক্রিসেন্ট অটোমোবাইলস লিমিটেড পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার মো. আব্দুল আহাদ বলেন, সকালে ১০টা পর্যন্ত তেল দিতে পেরেছি। এরপর শেষ হয়ে যাওয়ায় নিয়মিত চুক্তিতে থাকা স্কয়ার গ্রুপের সবগুলো গাড়িতেও তেল দিতে পারিনি। দুপুর ১টার পরে নারায়ণগঞ্জ ডিপো থেকে তেলের গাড়ি এসেছে। সাথে সাথে আনলোড করেই তেল দেওয়া শুরু করেছি।আগে অকটেনের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৩১ টাকা। এখন ছয় টাকা কমে ১২৫ টাকা হয়েছে। পেট্রোলেও ছয় টাকা কমে ১২১ টাকা হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিন এতদিন বিক্রি হয়েছে লিটার প্রতি ১০৬ টাকা ৭৫ পয়সা; এই দাম থেকে ১ টাকা ২৫ টাকা কমিয়ে ডিজেল ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। গতকাল রোববার প্রথম প্রহর থেকে এ দাম কার্যকর হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হক বললেন, জ্বালানির দাম বাড়লে বা কমলে পরের দিন পাম্প খোলায় কয়েক ঘণ্টায় এরকম সমস্যা হয়, তাই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যখনই তেলের দাম কম-বেশি হয়, পরের দিন ডিপো থেকে সাপ্লাই লেট হয়। অডিট না গেলে পাম্প খুলতে পারবে না। স্টক দেখে তারপর চালু হয়। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। যথেষ্ট তেল মজুদ রযেছে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জানান, গত শুক্রবার-শনিবারের পর রোববার অনেক জায়গায় পাম্পে তেল থাকে না। ১১টার মধ্যে তেল চলে আসে। তাতে কয়েক ঘণ্টা বিলম্ব হয়। বেলা ২টার পর সবখানে স্বাভাবিক অবস্থা। ৪টার ভেতরে সারাদেশেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
রোববারের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে এই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হক বলেন, গত দুদিন সাপ্লাই ডিপো বন্ধ ছিল। শুক্র ও শনিবার সব সময় ডিপো বন্ধ থাকে। এরপর রোববার মোটামুটি ডিপো ড্রাই থাকে। ১০-১১টায় তেল চলে আসে। আমার পাম্পও বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। বেলা ২টার পরে পুরোদমে চলছে।
তিনি বলেন, গত শনিবার দাম সমন্বয় করেছে সরকার। এরপর বিপিসি, মন্ত্রণালয় ও তেল কোম্পানির একটি অডিট হয়। এটা সব সময় হয়। দাম হ্রাস-বৃদ্ধি হলে এ অডিট হয়। এটা না করলে বিরাট একটা ফাঁকি থাকার সম্ভাবনা থাকে। পুরো টিম স্টক মিলিয়ে দেখেন। এ কারণে পাম্পগুলো খুলতে অনেক দেরি হয়।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য