-->
শিরোনাম

এক পরিবারের সবাই প্রতিবন্ধী

জে আই সমাপ্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
এক পরিবারের সবাই প্রতিবন্ধী
‘অটোজোমাল ডমিনেন্ট’ রোগে আক্রান্ত লালমনিরহাট পরিবারটি

‘অটোজোমাল ডমিনেন্ট’ একটি জেনেটিক রোগ। বংশগতভাবেই এ রোগ ছড়ায় বলে জানিয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। এই রোগে আক্রান্ত হলে চেহারার আকৃতি পরিবর্তন ঘটে। এই রোগে আক্রান্ত একই পরিবারের চারজন। ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে জীবন তাদের। কিন্তু এর পরও তাদের সঠিকভাবে মিলছে না দুমুঠো অন্ন। পরিবারের একজন প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও বাকিরা পাচ্ছেন না। বলছি লালমনিরহাট শহরের প্রতিবন্ধী মনিজা বেওয়ার পরিবারের কথা। শহরের শহীদ শাহজাহান কলোনির বস্তি এলাকায় ভাড়াটে এক বাড়িতে থাকে এই পরিবার।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২৬ বছর আগে মনিজা বেওয়ার স্বামী আব্দুল লতিফের মারা যান। এরপর থেকেই মনিজা বেওয়া তার শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়ে এবং প্রতিবন্ধী দুই ছেলে মাসুদ রানা ও মানিক ইসলামকে নিয়ে বেঁচে আছেন বহু কষ্টে। বংশগতভাবে ‘অটোজোমাল ডমিনেন্ট’-এর কারণে তাদের বহন করতে হচ্ছে প্রতিবন্ধিতার অভিশাপ। বংশের অন্যরা কেউই রাখছেন না তাদের খবর। মা প্রতিবন্ধী মনিজা বেওয়া তার ছোট ছেলে প্রতিবন্ধী মানিক ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করেন ট্রেনে ট্রেনে। দিনভর সামান্য আয়ে টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে চলছে তাদের সংসার। অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের।

শুধু মনিজা বেওয়ার ভাগ্যে সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা জুটলেও এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত তার তিন প্রতিবন্ধী সন্তান। ভাড়াটে বাড়িতে থাকা ভূমিহীন এই প্রতিবন্ধী পরিবারটির স্বপ্ন নিজস্ব একটি বাড়িতে বসবাস করার। স্বপ্ন আছে কর্মের মাধ্যমে সংসার চালানোর।

এলাকাবাসী জানান, তাদের মুখাকৃতি অস্বাভাবিক হওয়ায় শিশুদের ভয়ের কারণে তারা তাই সবখানে যেতে পারেন না। শরীর অস্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি তারা সবাই কম দৃষ্টিসম্পন্ন। স্বপ্ন দেখা এই প্রতিবন্ধী পরিবারটির সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে সরকার ও সমাজের দয়ালু মানুষ এমনটিই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

প্রতিবন্ধী (ছোট ছেলে) মানিক ইসলাম জানান, তার বড় বোন আর ভাই প্রতিবন্ধী হওয়ার পাশাপাশি শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল। তাই তারা কিছুই করতে পারেন না। সব সময় বাড়িতে বসে থাকেন। আর তার মাসহ সে ভিক্ষা করে জীবন চালায়। তাদের আশা, সরকারিভাবে তাদের যদি ঘর ও ছোট কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তা হলে আর ভিক্ষাবৃত্তি করতেন না তারা।

প্রতিবন্ধী মা মনিজা বেওয়া বলেন, ‘আমিসহ আমার তিন সন্তান বংশগতভাবে ‘অটোজোমাল ডমিনেন্ট’-এ আক্রান্ত। আমাদের আত্মীয়-স্বজন কেউই রাখছেন না কোনো খবর, করছেন না সহযোগিতা। ফলে বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হয়েছে আমাদের। তাই ছোট ছেলে মানিককে নিয়ে অতিকষ্টে ভিক্ষা করে জীবন চালাচ্ছি।

মন্তব্য

Beta version