মেহেরপুরে রয়েছে ১১১টি ইটভাটা। এর মধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র একটির। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই কোনো ইটভাটার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিলেও বাকি ইঁভাটাগুলো চলছে বহালতবিয়তে। আবার অবৈধ হলেও প্রতিটি ইটভাটাকে দিতে হচ্ছে ভ্যাট।
জানা গেছে, গত ৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স না থাকায় অভিযান চালানো হয় মেহেরপুর সদর উপজেলার চঞ্চলের মালিকানাধীন ইটভাটায়। বৈধ কাগজপত্র না থাকা এবং ইট পোড়াতে কাঠ ব্যবহার করায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় সেটি। অথচ তার কয়েকদিন আগেই চালু করা হয় ভাটাটি। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ।
আবু সাঈদ সাংবাদিকদের জানান, ভাটার লাইসেন্স না থাকা ও ভাটাতে কাঠ পোড়ানোর অপরাধে ওই ভাটায় অভিযান চালানো হয়েছে।
ভাটামালিক চঞ্চল বলেন, ‘ভাটার লাইসেন্সের জন্য ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরেও ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো লাইসেন্সই আমাকে দেওয়া হয়নি। এভাবেই কয়েক বছর ধরে ভাটা চালিয়ে আসছি। সে মোতাবেক ৭ ডিসেম্বর আমার ভাটায় আগুন দিই। আগুন দিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খরচ তো রয়েছেই। অথচ লাইসেন্স না থাকায় আমার ভাটায় অভিযান চালিয়ে ভাটা ভেঙে দেওয়া হয়।
‘এতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছি। তবে গ্রামবাসীর সহায়তায় আবারও ভাটা সংস্কার করে করে ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। ইট পুড়িয়ে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করব। তবে আবারও আমার ভাটায় অভিযান চালানো হলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ব। কারণ ব্যাংক ও বিভিন্ন জায়গা থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আবারও ভাটা চালু করেছি’ যোগ করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক একাধিক ভাটা মালিক বলেন, ‘জেলার একটি ভাটা ছাড়া কোনো ভাটার লাইসেন্স নেই। আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেও লাইসেন্স পায়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ভাটার লাইসেন্স দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কাউকেই লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। এখন আমরা কোথায় যাব। আমরা অবৈধ হলেও প্রত্যেক ভাটা থেকে প্রতিবছর জেলা প্রশাসকের ফান্ডে আমাদের দিতে হয় ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।’
ইটভাটা মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ সাজ্জাদুর রহমান মিলন বলেন, ‘মেহেরপুরে অনুমোদিত হওয়া ভাটার সংখ্যা ৩৫টি। অথচ অনুমোদিত হওয়া ভাটাগুলোকেও লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিছুই দেওয়া হচ্ছে না। গেল বছরে আমরা জেলার ৯৯টি ভাটা থেকে ভ্যাট প্রদান করেছি ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এবার আমাদের আনা হয়েছে এনবিআরের নিবন্ধনের তালিকায়। তারপরও আমরা অবৈধ।
‘আমার নিজের ভাটার লাইসেন্সের জন্য ইউনিয়ন, ভূমি অফিস ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র, স্থানীয় জনগণেরও অনাপত্তিপত্র দিয়ে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র আমরা পায়নি।’
মেহেরপুর কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের সহকারী কমিশনার এসএম শারাফত হোসেন বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান উৎপাদন ও সরবরাহে গেলেই তাদের ভ্যাট দিতে হবে। সে প্রতিষ্ঠান বৈধ হোক, আর অবৈধ হোক। আর ইটভাটাগুলো আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যাটের আওতায় চলে আসে। ৩১ মার্চের মধ্যে তাদের পুরো ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে।
‘গত বছর জেলার প্রতিটি ভাটা থেকে শতভাগ ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। আর বেশ কয়েক বছর আগের বেশ কয়েকটি ভাটার ভ্যাট বাকি রয়েছে। সেগুলো ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে বকেয়া ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক মুনছুর আলম খান বলেন, ‘শুধু একটি ভাটা নয়, পর্যায়ক্রমে জেলার প্রতিটি অবৈধ ভাটায় অভিযান চালানো হবে। তবে ইটভাটা মালিকের কাছ থেকে জেলা প্রশাসন টাকা নিয়েছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেয়। আর যারা লাইসেন্সের আবেদনের ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করতে পারেনি তাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্রের কাগজ ভাটা মালিকরা আবেদনপত্রে দিতে পারেনি।’
কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতাউর রহমান বলেন, ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন ২০১৩ অনুযায়ী যে ধারাগুলো রয়েছে তারা কোনোটিই ইটভাটা মালিকরা পূরণ করতে পারেনি। সে জন্য তাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়া যায়নি।’
মন্তব্য