-->
শিরোনাম

ভিক্ষুক থেকে ব্যবসায়ী!

রুবেল খান, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ভিক্ষুক থেকে ব্যবসায়ী!
নগরীর কাজির দেউড়ি মোড়ে ভ্যান গাড়িতে ফলমূল বিক্রি করছেন মো. আশরাফুল কবির। ছবি- ভোরের আকাশ

যশোরের দরিদ্র পরিবারে জন্ম মো. আশরাফুল কবিরের। জন্ম থেকেই একটি পা বাঁকা। দরিদ্রতার কারণে সপ্তম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় কেউ চাকরিও দেয়নি। ক্র্যাচে ভর করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন ৫৯ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ।

বাধ্য হয়েই ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে হয়েছে তাকে। চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় ভিক্ষা করছেন তিনি গত ২৪ বছর ধরে। তবে মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা-পয়সা চেয়ে নিতে অনেক সংকোচ হতো তার।

কিন্তু আয়-রোজগারের বিকল্প কোনো কিছু না থাকায় ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না তার। তবে মনে মনে স্বপ্ন ছিল, ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা করার। টাকার অভাবে সেটিও এতদিন হয়ে ওঠেনি।

প্রবাদে আছে, ‘ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।’ ভিক্ষুক কবিরেরও ছিল অদম্য ইচ্ছাশক্তি। দরিদ্রতা তাকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে না দিলেও ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ব্যবসায়ী হওয়ার যে দৃঢ় মনোবাসনা ছিল, সেটিই শেষ পর্যন্ত তার স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

কবির এখন ব্যবসায়ী। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি আর ভিক্ষা করছেন না। নগরীর কাজির দেউড়ি মোড়ে ভ্যান গাড়িতে সুলভমূল্যে ফলমূল বিক্রি করছেন তিনি। রোটারি ক্লাব অব চট্টগ্রাম কমার্শিয়াল সিটির আর্থিক সহায়তায় এই ফলমূলের ভাসমান দোকান দিয়েছেন কবির।

ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ফলমূলের ব্যবসা করতে পেরে ভীষণ খুশি ভিক্ষুক থেকে ব্যবসায়ী হয়ে যাওয়া মো. আশরাফুল কবির। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে ব্যবসা করতে পারিনি। প্রতিবন্ধী হওয়ায় কেউ চাকরিও দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে এত দিন ভিক্ষা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে কঠিন কাজ মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা-পয়সা চাওয়া। মনে খুব কষ্ট ছিল। কিন্তু ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ছোটখাটো একটা ব্যবসা করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু টাকার অভাবে এতদিন সেটাও করার সুযোগ হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি একজন মানুষকে বলেছিলাম, আর ভিক্ষা করতে চাই না। ছোটখাটো একটা ব্যবসা করতে পারলে ভিক্ষা করব না। তিনি আমার প্রতি সদয় হলেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তিনিই রোটারি ক্লাবের মাধ্যমে আমাকে ব্যবসা করার জন্য টাকা জোগাড় করে দিলেন।

‘সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছি। এখন মনের দিক থেকে বেশ আনন্দে আছি। কারো কাছে এখন আর হাত পাততে হচ্ছে না। এটাই বড় আনন্দের ব্যাপার।’

আশরাফুল কবির জানান, দরিদ্রতার কারণে নিজে পড়াশোনা বেশি করতে পারেননি। তাই ভিক্ষাবৃত্তির মতো অসম্মানজনক পেশাকে বেছে নিতে হয়েছিল তার। তবে ভিক্ষা করে নিজের ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন।

কবির বলেন, ‘আমি টাকা-পয়সার অভাবে পড়াশোনা করতে পারিনি। তাই অনেক কষ্ট করে হলেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছি, যাতে আমার মতো ওদেরকে ভিক্ষা না করতে হয়। আমার বড় মেয়ে এসএসসি পাস। মেঝ মেয়ে বিএ পাস। ছোট মেয়ে এইচএসসি পাস। একমাত্র ছেলে আরিফুল হক আসিফ এখন দশম শ্রেণিতে পড়ে।’

তিন মেয়েকে মধ্যবিত্ত ঘরে বিয়ে দিয়েছেন জানিয়ে কবির বলেন, ‘আমি গরিব হলেও তিন মেয়ে শিক্ষিত হওয়ায় মধ্যবিত্ত ঘরে তাদের বিয়ে দিতে পেরেছি। এর মধ্যে মেঝ মেয়েজামাই একটি স্কুলের শিক্ষক। ছোট মেয়েজামাই একটি আড়তে চাকরি করে। আর বড় মেয়েজামাইয়ের বাপের অনেক সম্পত্তি রয়েছে। সেগুলো সে দেখাশোনা করে।’

মেয়েরা সবাই স্বামীর ঘরে বেশ সুখেই আছে বলে জানান তিনি।

কবিরের বাড়ি যশোর জেলার সদর থানার কচুয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামে। তার বাবা মো. আলী ২৫ বছর আগে মারা গেছেন। মা ওজুফা বেগম বেঁচে আছেন। ছয় ভাই এক বোনের মধ্যে কবিরই সবার বড়। ১৯৮৮ সালে বিয়ে করেন তিনি।

মন্তব্য

Beta version