-->
শিরোনাম
নাসিক নির্বাচন

তৈমুরের প্রচারে লাঙ্গলের বিজয়ীরা

মোহাম্মদ বিল্লাল হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
তৈমুরের প্রচারে লাঙ্গলের বিজয়ীরা
তৈমুরের নির্বাচনী প্রচারে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা

প্রার্থী না থাকায় এবারের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেনি জাতীয় পার্টি। আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে সমর্থন দেয়ার কথা জানায়নি দলটি।

তবে এ দলের লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ইউপি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া তিন চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। মিছিলের প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে ভোটও চেয়েছেন তারা।

এছাড়া জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের নিয়ে কিছুদিন আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদস্য পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া তৈমুরের বাস ভবনে বৈঠকও হয়েছে। যদিও সেই বৈঠকে তারা দলের পরিচয় প্রকাশ করেননি।

মূলত গত শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের ২৫ নং ওয়ার্ডে তৈমুর আলমের নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগে এ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা অংশ নিয়েছেন। মিছিলের প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে তৈমুরের পক্ষে ভোটও চেয়েছেন তারা।

প্রচারণায় জাতীয় পার্টির নেতা ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনকে পেয়ে আনন্দ বেড়ে যায় তৈমুরের। তিনি ফুলের মালা পড়ে তাদের নিয়ে এক সঙ্গে হাঁটছিলেন।

তবে নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে থাকার আভাস দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎ বিএনপির সদ্য ছুটি পাওয়া নেতার প্রচারণায় তাদের দেখে চমকে গেছে নগরবাসী। যদিও তারা বলছেন- দলীয়ভাবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে তৈমুরের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন তারা।

নারায়ণগঞ্জ বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়া চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন বলেন, ‘আমি তৈমুর আলম খন্দকারকে ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করেছি। এখানে আমার দল জাতীয় পার্টির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এবারের নির্বাচনে আমাদের দলীয় কোনো প্রার্থী নেই। তৈমুর আলম খন্দকার স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি একজন ভালো মানুষ ও বর্ষীয়ান নেতা। মানুষ পরিবর্তন চায়, সেই পরিবর্তনের লক্ষ্যেই তৈমুর আলমকে সমর্থন করছি।’

কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মায়ের মতো দেখি। ২০১১ সালে আমার নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু আমি শামীম ওসমানের সেই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আইভীর নির্বাচন করেছিলাম। বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমপি সেলিম ওসমানের সমর্থনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করি। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও তাদের ভোটে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত। কিন্তু আইভী আমার সেই জয়কে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেছিলেন।’

আইভীর ওই মন্তব্যের পর থেকেই তার প্রতি ক্ষোভ রয়েছে জানিয়ে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে তৈমুর আলম খন্দকারকে সমর্থন করেছি। তিনি একজন বর্ষীয়ান নেতা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ। আমার সমর্থনের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার সমর্থনের বিষয়ে এমপি সেলিম ওসমানও কিছু জানেন না।’

এ বিষয়ে জানতে একই উপজেলার বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি তা রিসিভ করেননি। তার এলাকায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

মূলত ইউপি নির্বাচনে এই তিন চেয়ারম্যানের সমর্থনে ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ.কে.এম সেলিম ওসমান। তাদের বিজয়ী করতে দলের নেতাকর্মীদের একত্রিত করেছিলেন তিনি। তার সমর্থন দেয়া চেয়ারম্যানরা ইউপিতে নৌকার প্রার্থীদের হারিয়ে এবার সিটিতে নৌকার বিরোধীতা করছেন। দলের ঘোষণা না পেলেও তাদের ছুটে যাওয়া আটকানো যায়নি।

তবে তাদের প্রচারণার সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ.কে.এম সেলিম ওসমান।

তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোনো প্রার্থী দেয়নি। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশ নিলে নেতাকর্মীরা তাকেই সমর্থন দিত। জাতীয় পার্টি এ নির্বাচনে কাউকে সমর্থন দেয়নি। যারা তৈমুর আলম খন্দকারকে সমর্থন দিয়েছে, এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

সেলিম ওসমান বলেন, ‘এ নির্বাচনে আমার কাছে কোনো প্রার্থী সমর্থন চায়নি এবং কোনো আবেদনও ছিল না। সমর্থনের বিষয়ে কেউ আমার কাছে আসেও নাই, সমর্থনও চায় নাই।’

নির্বাচনের প্রচারণার শুরুর দিকে সেলিম ওসমান জানিয়েছিলেন যেখানে নৌকা আছে, সেখানে লাঙ্গল নাই। তাহলে তার দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আগের দুটি নির্বাচনেও নারায়ণগঞ্জে প্রার্থী দেয়নি জাতীয় পার্টি। প্রথম নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক ছিল দলটি। দ্বিতীয় নির্বাচনের সময় তারা সংসদে প্রধান বিরোধী দল, আবার সরকারেরও অংশীদার। এবারও প্রধান বিরোধী দল, তবে এবার আর সরকারে নেই তারা।

২০১৬ সালের শেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পাশে ছিল।

২০১১ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউকে সমর্থন না দেয়ায় শামীম ওসমান ও আইভী পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়ে ওঠেন, তখন শামীমের পাশে ছিল জাতীয় পার্টি। তারপরও আইভীর কাছে পেরে ওঠেননি তার প্রতিদ্বন্দ্বী।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আইভী-তৈমুর ছাড়া আরও চার প্রার্থী আছেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাসুম বিল্লাহ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস, খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের জসিম উদ্দিন, এবং স্বতন্ত্র থেকে কামরুল ইসলাম। তারাও সিটির গলিতে গলিতে প্রচারণায় দিন রাত পার করছেন।

আগামী ১৬ জানুয়ারি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ২৭টি ওয়ার্ডে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৭টি ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। এদের মধ্যে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৯ জন পুরুষ ও ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৭ জন নারী ভোটার। চারজন আছেন ট্রান্সজেন্ডার।

মন্তব্য

Beta version