-->
শিরোনাম

হাসি নেই প্রতিমা কারিগরদের মুখে

সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর
হাসি নেই প্রতিমা কারিগরদের মুখে
পৌর এলাকার ভাজনডাঙ্গা পালপাড়ায় মূর্তি তৈরি করছেন এক কারিগর

আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা। এই উৎসবকে সামনে রেখে ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতি বছরই মন্দিরের পাশাপাশি জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলার পাড়া-মহল্লায়ও হয় বিদ্যার দেবীর পূজা। এসব পূজার জন্য যেসব কারিগর প্রতিমা বানান তাদের মুখে নেই হাসি। কারণ সরস্বতী প্রতিমা তৈরি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করলেও পুনরায় করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় ক্রেতা সংকটে ভুগছেন তারা।

সরেজমিনে শহরের পৌর এলাকার ভাজনডাঙ্গা পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সরস্বতী প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। কাঠামো তৈরির পর এখন মাটির কাজ চলছে। কয়েকদিনের মধ্যেই রঙের কাজ শুরু করা হবে। প্রতিটি বাড়ির পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নিয়েছেন প্রতিমা তৈরির কাজে। প্রতিমার মাটির কাজ শেষে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির উঠান এবং মাঠে সারি সারি করে রাখা হয়েছে প্রতিমা। ওই এলাকায় প্রায় এক হাজার প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে বিক্রির জন্য।

শহরের ভাজনডাঙ্গা পালপাড়ার বাসিন্দা সরস্বতী প্রতিমা তৈরির কারিগর প্রদীপ চন্দ্র পাল জানান, গত বছর বাণী-অর্চনার জন্য একশ’টি প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এ বছর তৈরি করছেন ৬০টি। তারপরও সবক’টি বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ৫শ’ থেকে ১০ হাজার টাকা দামের প্রতিমা রয়েছে আমার কাছে। এখনো প্রতিমার অর্ডার পাইনি। ক্রেতাই আসছেন না। তাছাড়া করোনার কারণে ভালো দাম পাওয়া যাবে কি নাÑ তা নিয়েও শঙ্কায় আছি।পাচু গোপাল পাল নামে আরেক কারিগর বলেন, গত বছরও করোনার কারণে সরস্বতী প্রতিমা বানিয়ে অনেক লোকসান হয়েছে। এ বছরও আবার করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় রয়েছি। প্রতিমা বানিয়ে রাখছি, কিন্তু মন ভালো নেই।

তিনি আরো বলেন, গত দেড় বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি।

পুরুষ সদস্যের পাশাপাশি প্রতিমা তৈরিতে কাজ করছেন নারী সদস্যরাও। গৃহবধূ সুচিত্রা পাল বলেন, পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি আমি নিজেসহ বাড়ির সব সদস্যই প্রতিমা তৈরির কাজে সহায়তা করে। প্রতিমা তৈরি করে বিক্রি করে যা লাভ হয় তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে; কিন্তু করোনার কারণে ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। কোনোরকমে দিনাতিপাত করছি।

প্রতিমা তৈরির কারিগর বিনয় পাল বলেন, প্রতিদিন ৭শ’ টাকা মজুরি হিসেবে আমি প্রতিমা তৈরির কাজ করি। করোনার কারণে এ বছর কাজ কম, তাই খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি।দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন পরেশ চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, দুর্গা, কালি, সরস্বতী, নারায়ণসহ বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করছি ৪০ বছর ধরে। প্রতিমা তৈরি করেই সংসার চালিয়ে আসছি; কিন্তু গত দেড় বছর করোনার কারণে পূজা-অর্চনা কমে যাওয়ায় প্রতিমার চাহিদাও কমে গেছে।

তিনি আরো বলেন, এ বছর ভেবেছিলাম সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করে লাভবান হতে পারব; কিন্তু করোনা আবার বেড়ে যাওয়ায় প্রতিমার অর্ডার কমে গেছে। খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছি আমরা। সরকার আমাদের একটু সহায়তা করলে আমরা ভালোভাবে বাঁচতে পারতাম।

মন্তব্য

Beta version