বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র চরকুকরি-মুকরি বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে বুড়া গৌরাঙ্গ নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে দুর্গম এ জনপদকে।
এখনো সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে শেষে হবে পুরো কাজ। এজন্য দিন-রাত চলছে বিদ্যুৎ কর্মীদের কর্মযজ্ঞ। তবে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু না হলেও আগেই ব্যবহারের সুযোগ পাওয়ায় আনন্দে অভিভূত গ্রাহক।
বিদ্যুতের আওতায় আসায় তাদের জীবনযাত্রায়ও ঘটেছে ব্যাপক পরিবর্তন। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মিলছে বাড়তি সুবিধা, লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ছোটখাটো শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ বাড়ছে এলাকাবাসীর।
মূলত মিনি সুন্দরবন নামে পরিচিত কুকরি-মুকরির ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই বহু পর্যটক আসেন ভোলার এ জনপদে। চারদিকে পানিবেষ্টিত ছোট এ দ্বীপটির মনোরম দৃষ্টি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।
এতদিন বিদ্যুৎ না থাকায় দ্বীপটিতে রাত্রিযাপন ছিল বিড়ম্বনার। রিসোর্টগুলোয় নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে রাতে দু-চার ঘণ্টার জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা সম্ভব হলেও দিনের পুরো সময়টাই থাকতে হতো বিদ্যুৎবিহীন। ফলে পর্যটকরা কুকরি-মুকরি আসতে অনাগ্রহী হয়ে পড়তেন। এখন সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ চালু হওয়ায় পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা অনেকাংশে বেড়ে গেছে।
কুকরি কোস্টাল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার কাম রেস্ট হাউসের স্টাফ রমিজ জানান, রেস্ট হাউস হওয়ার পর বিদ্যুৎ ছিল না, জেনারেটর ব্যবহার করে তেল খরচ অনেক বেশি হতো। বিদ্যুৎ হওয়ায় খরচ অনেক কম হয়। এখন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক ভিআইপি পর্যটকরাও আসেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ফারুক মজুমদার বলেন, ‘কুকরি-মুকরিতে বিদ্যুৎ আসাতে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক লাভবান হয়েছি। ক্ষুদ্র শিল্পকারখানার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া আমাদের জীবনযাত্রার মানে অনেক পরিবর্তন এসেছে।’ ছাত্রী সুরাইয়া জানান, আগে বিদ্যুৎ না থাকায় হারিকেন জ্বালিয়ে লেখাপড়া করতে খুব কষ্ট হতো। এখন বিদ্যুতের আলোতে অনেক রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করা যায়।
ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জি এম আলতাফ হোসেন জানান, বিদ্যুতের কারণে এখানে ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ পেয়ে এখানকার মানুষ আনন্দে আত্মহারা। শুধু এ কুকরি-মুকরিই নয়, ভোলার সব চরকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরো জানান, কুকরি-মুকরিসহ আশপাশের ১৬টি চরে ১ হাজার ৪২৮ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এতে ৪০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে। ব্যয় হবে ৩৮৭ কোটি টাকা।
মন্তব্য