চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের রাজধানী নামে খ্যাত হলেও সেখানে বরই চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন চাষিরা। আমের ব্যবসায় লোকসানে পড়ে বরই চাষ করে এখানকার কৃষকদের ভাগ্য বদল হতে শুরু করেছে। বরই চাষে লাভবান হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। আমের মতো সুমিষ্ট বিভিন্ন জাতের বরই নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখন সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বরইবাগান গড়ে তুলেছেন তুফান আলী। তার বাগানে শোভা পাচ্ছে বল সুন্দরী, রূপসী ও কাশমেরিসহ বিভিন্ন জাতের বরই। কোনো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর ১২ বিঘা জমির বরই বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।
তুফান আলী বলেন, আমের ব্যবসায় লোকসানে পড়ে দুই বছর আগে থেকে বরই চাষ করছি। গত বছর করোনার কারণে বরইয়ের দাম না পেয়ে লোকসানের মুখে পড়েছিলাম। কিন্তু থেমে থাকিনি, এ বছর আবারও ১৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে গড়ে তুলেছি বরই বাগান। এখন আমার বাগানে থোকায় থোকায় দুলছে বিভিন্ন জাতের বরই।
তিনি বলেন, খরচ হয়েছে প্রায় আট লাখ টাকা। পরিপক্ব হতে শুরু করেছে গত কয়েকদিন থেকে। ইতোমধ্যে শুরু করেছি বরই বিক্রি। আশা করছি, বরই বিক্রি করতে পারলে ১৫ লাখ টাকা পাব। এখনকার বাজারে বল সুন্দরী বরই বিক্রি করছি ৫০ টাকা, কাশমেরি ৪০ ও রূপসী ১২০ টাকা দরে। তবে এ বরইগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি না। প্যাকেটিং করে চট্টগ্রাম, ফেনী ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকি। তিনি আরও বলেন, আমার বাগানে শিলাবৃষ্টিতে অনেক বরইয়ের ক্ষতি হয়েছে। তবে দাম ভালো পেলে এমন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। তার ধারণা, অন্য ফসল চাষের চেয়ে বরই চাষে খরচ অনেক কম।
বরইচাষি তুফান আলী বলেন, আমার কাছে সব থেকে বল সুন্দরী বরই প্রিয়। কারণ এ বরইয়ের চাহিদা অনেক বেশি, ফলনও ভালো। আর পোকার আক্রমণ খুব কম। এ অঞ্চলের প্রায় বাগানে বল সুন্দরীর চাষ হয়।
গোমস্তাপুর উপজেলার বরইচাষি হাফেজ আলী জানান, এ বছর তিন বিঘা নিজ জমিতে বরই চাষ করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। ফুল অনেক বেশি হয়েছিল, তাই ফল ধরেছে অনেক। বেশি ফল ধরায় অনেক গাছের ডাল ভেঙে পড়ছে। তার বাগানে বল সুন্দরী বরই বেশি। আশা করছেন- এই তিন বিঘা বরইবাগান থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা পাবেন তিনি।
ইসলামপুর এলাকার রবিন আলী বলেন, করোনায় গত বছর কলেজ বন্ধ থাকায় বরই চাষ শুরু করেছিলাম। কিন্তু দাম না থাকায় তেমন লাভ করতে পারিনি। তবে ওই গাছেই ভালো পরিচর্যা করায় এবার ভালো ফল ধরেছে। গত বছরের তুলনায় খরচও কম হয়েছে। এ ছাড়া গত বছর থেকে এবার বরইয়ের দামও ভালো। গত বছর যে বরই বিক্রি করেছিলাম ১০-১৫ টাকা কেজি দরে; এবার বিক্রি করছি ৫০-৭০ টাকা কেজি। এক্ষেত্রে এবার ভালো লাভের আশা করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ জেলার মানুষ বরই চাষে মেতে উঠেছেন। এ বছর ৭৯০ হেক্টর জমিতে বরইয়ের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বল সুন্দরী বরই বেশি। তবে গত বুধবারের শিলাবৃষ্টিতে সাত হেক্টর জমির বরই নষ্ট হয়েছে। সুস্বাদু বল সুন্দরী বরইসহ বিভিন্ন জাতের বরই জেলা থেকে দেশের সব অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
মন্তব্য