-->
শিরোনাম

দাম কম, গমে কৃষকের অনাগ্রহ

সোহেল রানা, ঠাকুরগাঁও
দাম কম, গমে কৃষকের অনাগ্রহ
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুরের একটি গম ক্ষেতে কৃষক কাজ করছেন

দেশে সিংহভাগ গম উৎপাদিত হয় ঠাকুরগাঁওয়ে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দাম কম হওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এতে কৃষকরা অন্য ফসল আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। ২০২১-২২ মৌসুমেও ঠাকুরগাঁওয়ে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রাও ব্যাহত হয়েছে।

কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, চার বছর ধরেই গম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকেরা। সারা দেশের উৎপাদিত পাঁচ ভাগের এক ভাগ গম উৎপাদন হতো এই জেলায়। কিন্তু উৎপাদনে খরচ না ওঠায় চাষিদের আবাদের তালিকা থেকে গম ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে কৃষকদের গম চাষে আগ্রহী করে তোলোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী পাঁচ বছরে গম চাষ কমেছে ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে। ২০১৬-১৭ মৌসুমে ৬৭ হাজার ৮২০ হেক্টর, ২০১৭-১৮ মৌসুমে ৬১ হাজার হেক্টর, ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৫০ হাজার ২২০ হেক্টর, ২০১৯-২০ মৌসুমে ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর, ২০২০-২১ মৌসুমে ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর, ২০২১-২২ মৌসুমে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হয়েছে।

সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খোচাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এক সময় যেসব জমিতে কৃষকেরা গম চাষ করতেন সেইসব জমিতে এখন ভুট্টা, মরিচ, আলুসহ লাভজনক ফসলের চাষাবাদ চলছে ।

জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বিলপাড়া গ্রামের রহিম উদ্দিন বলেন, ‘এক কাঠা জমিতে গমের আবাদ করে দাম পাওয়া যায় ৯০০ টাকা। আবার ওই এক কাঠা জমিতে আলু বিক্রি করে এক হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। তাহলে গম আবাদ বাদ না দিয়ে কি করবো।’

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী বাজার গ্রামের হাশেম আলী বলেন, ‘আমি গত বছর এক বিঘা জমিতে ২৫ মণ গম পেয়েছিলাম। প্রতি মণ গম বিক্রি করি ৯০০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। এতে এক বিঘায় লাভ পেয়েছি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

‘এত পরিশ্রমের পর এই লাভে পোষায় না। যদি প্রতিকাঠায় এই লাভ হতো তাহলে ঠিক ছিল। এভাবে আর কত দিন চাষ করা যায়।’

সদর উপজেলার গম চাষি গণি মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘সংগ্রহের সময়ে কৃষকরা সরকারি গোডাউনে গম দিতে পারে না। সরকার গমের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করলেও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের জন্য কৃষকরা এর সুফল পায় না। তাই গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে তারা।’

গাঙ্গর এলাকার চাষি নূর ইসলাম বলেন, ‘বাজারে গমের ভালো বীজ পাওয়া যায় না।’

বিএডিসি চুক্তিবদ্ধ বীজ ডিলার ও ঠাকুরগাঁও শহরের মা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রফিকুজ্জামান বলেন, ‘গমের বীজ গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কম বিক্রি হচ্ছে। যে ফসলে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন সেই ফসলই বেশি আবাদ করছেন। এতে করে আমরা ডিলাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘এ বছর জেলায় ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে।’

মন্তব্য

Beta version