-->
শিরোনাম

নয়নাভিরাম গাবরাখালী গারো পাহাড়

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ ব্যুরো
নয়নাভিরাম গাবরাখালী গারো পাহাড়
গারো পাহাড়

সবুজ অরণ্য, ছোট ছোট মেঘরাশি ও পাখিদের কলতানে মুখর পরিবেশ। চারপাশে ছোট-বড় টিলা দাঁড়িয়ে আছে ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো। আস্তে আস্তে পাহাড়ের উপরে উঠে উত্তরে তাকালেই দেখা যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা পাহাড়। এ যেন নয়নাভিরাম নিসর্গ। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার গাবরাখালী গারো পাহাড় বা হিল পর্যটন কেন্দ্রের অপরূপ সৌন্দর্য এভাবেই সবাইকে আকৃষ্ট করে।

এছাড়া এই পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশ মুখেই রয়েছে সুউচ্চ পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলের মনোরম ঝরনাধারা। নিচু লেকে রয়েছে প্যাডেল বোট, ঝুলন্ত ব্রিজ। লেকজুড়েই রয়েছে দেশীয় হাঁস, সুইমিং পুল, ওয়াচ টাওয়ার, কাজুবাদাম, আগর (সুগন্ধি), চা ও কফির গাছ। পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য রয়েছে জারামবং (পূর্ণিমা) ও ফ্রিংতাল (শুকতারা) নামে দুটি রেস্ট হাউস।

মূলত ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পৌরশহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা এলাকায় গাবরাখালী পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। ১২৫ একর এলাকাজুড়ে ছোট-বড় ১৬৭টি টিলা নিয়ে গঠিত পর্যটন কেন্দ্রটির টিলাগুলো প্রায় ৭০ ফুট থেকে ২০০ ফুট উঁচু। এগুলো আবার চিতাখলা টিলা, যশুর টিলা, মিতালি টিলা, বাতাসি টিলা এমন বাহারি নামে পরিচিত। এই পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে সেখানে গড়ে উঠছে দোকানপাট, ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র।

জানা গেছে, ময়মনসিংহ জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম গাবরাখালীতে পর্যটন কেন্দ্র করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পাহাড়-টিলা জরিপপূর্বক এ এলাকায় পর্যটন খাতের উন্নয়ন ও বিকাশের পরিকল্পনা গ্রহণ করা শুরু হলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তা কিছুটা বিলম্বিত হয়। তবে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এটি গতি পায়। যা ইতোমধ্যে একটি চমৎকার পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ও ময়মনসিংহের সাবেক জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান গাবরাখালী পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সাবেক বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসানের দিকনির্দেশনায় বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক।

পাহাড়ে ঘুরতে আসা নুরুল হক নামে একজন পর্যটক দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমার বাসা কিশোরগঞ্জ পৌর শহরে। হালুয়াঘাট উপজেলার ১০ নম্বর ধুরাইল ইউনিয়নে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছি। এই সুযোগে গাবরাখালী পাহাড়টি ঘুরে গেলাম। এর সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ।’

আশরাফুল আলম সোহেল ও রাশিদুল ইসলাম নামে দুই যুবক জানান, তাদের বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায়। মোটরসাইকেলে করে হালুয়াঘাটে কোনো কাজে এলে তারা এই পাহাড়ে ঘুরতে আসেন। এই পাহাড়টিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তারা।

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রতিনিয়ত এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। আমরা স্থানীয় এলাকাবাসীর আয় বাড়ানোর জন্য লেকে মৎস্য চাষের উদ্যোগ নিয়েছি। পাহাড়ের কিনারা বেয়ে ভারত থেকে বয়ে আসা ছোট ঝরনা ধারায় রাবার ড্যাম দিয়ে পানি সংরক্ষণ করে বোরো মৌসুমে সেচ দেওয়া হচ্ছে। টিলায় বসবাসরতদের জন্য আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক জানান, গাবরাখালী গ্রামের পূর্বে হাজং ও বানাই জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। এর উত্তর প্রান্ত সংলগ্ন এলাকায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমানা। এই পিকনিক স্পটটি এখন শুধু পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটিকে ঘিরে স্থানীয় কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সমবায়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে আয়বর্ধক নানা কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করা হবে।

মন্তব্য

Beta version