-->

সেই আছপিয়াকে জমি ও ঘর হস্তান্তর

বরিশাল ব্যুরো:
সেই আছপিয়াকে জমি ও ঘর হস্তান্তর
আছপিয়ার মায়ের কাছে ঘর ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হচ্ছে

ভূমিহীন ও স্থায়ী ঠিকানায় গরমিল থাকায় পুলিশের কনস্টেবল পদে সকল নিয়োগ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় চূড়ান্ত পাশ করেও চাকরি আটকে যায় আছপিয়া ইসলাম কাজলের। এ বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশে চাকরি, সরকারি খাস জমি ও ঘর পেলেন বরিশালের হিজলা উপজেলার আছপিয়া ইসলাম কাজল।

মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে আছপিয়ার মা ঝরনা বেগমের হাতে ঘরের চাবি এবং জমির দলিল তুলে দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। বর্তমানে আছপিয়া পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত থাকায় ঘর ও জমির দলিল হস্তান্তরের সময় উপস্থিত হতে পারেননি।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গৌতম বাড়ৈ, উপজেলা চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ঢালী, হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজসহ উপজেলা প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা।

পুলিশের চাকরি ফিরে পাবার পরে সরকারিভাবে ঘর এবং জমি পেয়ে আনন্দিত আছপিয়ার পরিবার। প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসন ও গণমাধ্যমের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মা ঝরনা বেগম।

আছপিয়ার পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের হিজলা উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত সফিকুল ইসলামের মেয়ে আছপিয়া আক্তার কাজল। গত ১৫ বছর ধরে অন্যের জমিতে আশ্রিত হিসেবে থাকতেন তারা। ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেন আছপিয়া। পরিবারে মা, তিন বোন ও এক ভাই রয়েছে। ভাই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার আয়েই চলে তাদের সংসার।

আরও জানা গেছে, বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবলের শূন্য পদে নিয়োগের আবেদন করেন আছপিয়া। গত বছরের ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা, ২২৪ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আছপিয়া।

এরপর ২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসক প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও উত্তীর্ণ হন তিনি। সবশেষে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উত্তীর্ণ হন আছপিয়া।

কিন্তু চূড়ান্ত নিয়োগের পূর্বে গত ৮ ডিসেম্বর জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আছপিয়া এবং তার পরিবারকে ‘ভূমিহীন’ উল্লেখ করা হয়। সে অনুযায়ী জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্বাস।

এরপরই স্থায়ী ঠিকানা না থাকা এবং ভূমিহীন হওয়ায় আছপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়।

এ খবরে গত ৮ ডিসেম্বর বরিশাল নগরীর কাশিপুর এলাকায় রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে দিনভর বসে থাকেন আছপিয়া। এর আগে তিনি ডিআইজি’র সঙ্গে দেখা করেন।

বিষয়টি গণমাধ্যমের দৃষ্টিতে আসলে সংবাদ প্রকাশ হয়। যা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। এরপরই ভূমিহীন আছপিয়ার পরিবারকে পছন্দের জায়গায় জমি এবং মুজিব বর্ষের ঘর দেয়ার নির্দেশনা আসে জেলা প্রশাসনের কাছে।

পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের নির্দেশে আছপিয়ার পরিবারকে উপজেলার বরজালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম খুন্না গৌবিন্দপুর গ্রামে তাদের পছন্দ করা সরকারি জমিতে ঘর তুলে দেয়া হয়।

এর ‍আগে ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর শনিবার রাত ৮টার দিকে হিজলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র আসপিয়ার কাছে পৌঁছে দেন। এরপর নিয়মানুযায়ী পুলিশে যোগদান করেন আছপিয়া।

মন্তব্য

Beta version