-->
শিরোনাম

শ্যামাসুন্দরী এখন ময়লার ভাগাড়

নজরুল ইসলাম রাজু, রংপুর ব্যুরো
শ্যামাসুন্দরী এখন ময়লার ভাগাড়
শ্যামাসুন্দরী খাল দখলে-দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে

রংপুরের শ্যামাসুন্দরী খাল দখলে-দূষণে বিপর্যস্ত। খননের অভাবে আবর্জনায় ভর্তি খালটি দিন দিন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। আর দখলদারদের আগ্রাসনে ছোট হতে হতে বিলীনের পথে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী এই শ্যামাসুন্দরী খাল।

শ্যামাসুন্দরী খালটি ভরাট ও খননের অভাবে একটু পানিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গত বছর রংপুরে রেকর্ড পরিমাণ বন্যা হয়েছিল। ওই সময় খালটি ভরাট থাকায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল পুরো রংপুর নগর। নতুন করে খাল খনন না করলে এবার বন্যায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রাসহ সিটি করপোরেশন।

১৮৯০ সালে খালটি খনন করেন রাজা জানকি বল্লভ সেন। তিনি রংপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তার মা শ্যামাসুন্দরী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর মশার উপদ্রব কমাতে ও পানি নিষ্কাশনের জন্য এই খাল খনন করেছিলেন রাজা বল্লভ সেন। স্যার স্টুয়াট কেভিন বেইলি শ্যামাসুন্দরী খালটি উদ্বোধন করেন।

ঐতিহ্যবাহী খালটি বর্তমানে ময়লা-আবর্জনায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। দখলের কারণে অনেক জায়গায় এর অস্তিত্ব বিলীন। ঐতিহ্যবাহী খালটি সংস্কার এবং এর দুপাশের সৌন্দর্য বাড়াতে ২৫ কোটি টাকা খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে অনিয়মের কারণে পুরোটাই গচ্চা গেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

গুরাতিপাড়ার রফিকুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘মহানগরীতে মশার উপদ্রব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ময়লা-আর্বজনার কারণে মশার উৎপাত বেড়েছে। মশারি ও কয়েল ছাড়া দিনেও ঘরে থাকা যায় না। রংপুর শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কার না করায় মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে।’

নগরীর খলিফাপাড়ার আরাফত হোসেন জানান, শ্যামাসুন্দরী খাল ১৩৫ বছরের পুরানো। এই খালটি রাজা জানকি বল্লভ সেন তার মা শ্যামাসুন্দরীর স্মরণে খনন করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে ময়লা-আর্বজনায় পরিপূর্ণ হয়েছে এই খালটি। এ ছাড়া ৪৮২ দখলদারের রাহুগ্রাসের কাছে নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন প্রবাহের অন্যতম এই খালটি জিম্মি হয়ে পড়েছে।

নগরীর খলিফাপাড়ার আতিফা বেগম বলেন, ‘শুধু সিটির ড্রেনেই মশা মারা দেখি। আর অন্য জায়গায় চোখে পড়ে না সিটি করপোরেশনের মানুষের। এ মশার কামড়ে কোথাও স্থির থাকা যায় না। দিনের বেলায় মশারি দিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে।’

সাগরপাড়ার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাঘট নদীর উৎসমুখ থেকে শুরু হয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি নগরীর ভেতর দিয়ে খোখসা ঘাঘটের সঙ্গে মিলেছে। ৪০ থেকে ৯০ ফুট প্রশস্ত খালটি এখন কোথাও কোথাও ছয় থেকে আট ফুটে পরিণত হয়েছে। অনেকে বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশনের লাইন খালের সঙ্গে সংযোগ করে দিয়েছে।’

রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন মিয়া বলেন, ‘২০০৭-০৮ অর্থবছরে রংপুর শ্যামাসুন্দরী খালটি খনন হয়েছিল। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০১২ সালে প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যায়ে সে সময়ে শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কার, ওয়াকওয়ে ও খালের ওপর সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু পরে সে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

‘এরপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড এই খাল খননের একটি প্রকল্প হাতে নেয়। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার খাল খনন করে। অন্যদিকে ক্যাডি খাল সংস্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। এই কাজটি সম্পন্ন করা হলে সমস্যার সমাধান হবে।’

রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন বলেন, ‘শ্যামাসুন্দরী খালটিতে চারটি ব্রিজ পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে পানি প্রবাহ হবে। মশা নিধনে কার্যকর ভূমিকা অব্যাহত রয়েছে। সিটি করপোরেশন চেষ্টা করছে অতিদ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।’

রংপুর সিটি করপোরেশনের সহকারী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, ‘কেবল ফগার মেশিনের ধোঁয়া দিয়ে মশা নিধন পুরোপুরি হয় না। মেয়রের নির্দেশে এবার হ্যান্ড স্প্রের সাহায্যে কীটনাশক ছিটিয়ে এক ঘণ্টা পর ফগার মেশিনের ধোঁয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ঝোপঝাড় ছাড়া প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ মশা নিধন হয়।’

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বলেন, ‘দশটি ফগার মেশিন দিয়ে প্রতি ওয়ার্ডে ছয় দিন করে বিভিন্ন ড্রেন ও ঝোপঝাড়ে মশা নিধন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ছয়টি ফগার মেশিন কেনার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। খাল পুনর্খনন এবং সংস্কারের জন্য সরকার প্রায় এক শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।’

সিটি মেয়র মোস্তফা আরও বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খালের স্বরূপ ফিরিয়ে আনতে এটিকে দখল এবং দূষণমুক্ত করতে হবে।’

মন্তব্য

Beta version