কক্সবাজারে জিম্মি করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তোলা সেই নারীর মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্ট হাতে এসেছে উল্লেখ করে দ্রুত অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
গত জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসকরা ওই নারীর মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদন দেন বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাহফুজুর রহমানের স্বাক্ষর করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভিকটিমের শরীরে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ধর্ষণের শিকার হলে যে ধরনের আঘাত বা ক্ষতের চিহ্ন থাকে, সে ধরনের কিছু পাওয়া যায়নি। জোরপূর্বক বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ফলে শরীর ও যৌনাঙ্গে যে পরিস্থিতি থাকার কথা তা পাওয়া যায়নি। তার মানসিক অবস্থাও স্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে।’অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ মামলায় যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগপত্র দেওয়ার চেষ্টা করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।’গত বছরের ২২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন এক নারী। তার ভাষ্যমতে, তিনি স্বামী-সন্তান নিয়ে ওই দিন (২২ ডিসেম্বর) সকালে কক্সবাজার পৌঁছান। এরপর শহরের হলিডে মোড়ের সি ল্যান্ড হোটেলের ২০১ নম্বর রুম ভাড়া নেন। বিকেলে সৈকতে গেলে সাড়ে পাঁচটার দিকে তার স্বামীর সঙ্গে এক যুবকের বাগবিতণ্ডা হয়।
এর জেরে ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার কিছু পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। আর তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় জোর করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ওই নারীর অভিযোগ, তাকে শহরের একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে প্রথমে তিনজন ধর্ষণ করেন। তারপর নেওয়া হয় হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেলে। সেখানে আবারও তাকে ধর্ষণ করেন একজন।ঘটনার পরদিন ওই নারীর স্বামী চারজনের নাম উল্লেখ ও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলায় নাম উল্লেখ করা চার আসামি হলেন- কক্সবাজার শহরের মধ্যম বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ শফি ওরফে ইসরাফিল হুদা জয় ওরফে জয়া, মেহেদী হাসান বাবু ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।
নারীর করা ধর্ষণ মামলায় জেলে আছেন- আশিকুল ইসলাম, ইসরাফিল হুদা জয়, মেহেদী হাসান বাবু ও হোটেল ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন, কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ বাহারছড়া এলাকার রেজাউল করিম, একই এলাকার মেহেদী হাসান এবং চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের উলুবনিয়া গ্রামের মামুনুর রশীদ। তাদের বিরুদ্ধে ঘটনায় সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নামসহ অভিযুক্ত এবং সহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত সবাই বর্তমানে জেলে আছেন।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তোলা নারীর স্বামী প্রথম দিকে নিজেদের ‘পর্যটক’ হিসেবে দাবি করলেও পরে বেরিয়ে আসে তারা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন।
এছাড়া এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আশিকসহ কয়েকজন তাদের পূর্ব পরিচিত।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তোলা নারী কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামীমুন তানজীনের আদালতে জবানবন্দিতে জানান, তার সন্তান জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। সন্তানের চিকিৎসার জন্য অন্তত চার লাখ টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা জোগাড় করতেই তিন মাস আগে তারা কক্সবাজারে আসেন। কক্সবাজারে তিন মাস ধরে তারা বিভিন্ন হোটেলে কক্ষ ভাড়া করে থাকছিলেন।
তবে এর আগেও তারা কক্সবাজারে ছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে জেলা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ওই নারী। সে সময় একটি মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে গেলেও কিছু দিনের মধ্যে তিনি জামিনে ছাড়া পান।
মামলার পর ওই নারীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করে পুলিশ।
মন্তব্য