-->
শিরোনাম

নীলফামারীতে চিয়া ও কিনোয়ার প্রথম চাষ

শরিফুল ইসলাম, নীলফামারী
নীলফামারীতে চিয়া ও কিনোয়ার প্রথম চাষ
ইউরোপের ফসল কিনোয়া চাষ হচ্ছে নীলফামারীতে। ছবি ভোরের আকাশ

বিশ্বে উচ্চ পুষ্টিমান ও সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত চিয়া সিড ও কিনোয়া। বর্তমান বাংলাদেশের নীলফামারী জেলায় এই চিয়া সিড ও কিনোয়া প্রথম চাষ শুরু হয়েছে। ওষুধি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর দানাশস্য চিয়া সিড ও কিনোয়া চাষে এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী। ফলে কৃষকদের মাঝে এক নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান মিয়া। তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ২০ শতক জমিতে চিয়া সিড ও ১২ শতক জমিতে কিনোয়া আবাদ করেছে। যা ইতোমধ্যে ঘরে তোলার জন্য প্রস্তুত। কৃষক শাহজাহানের পাশাপাশি অন্য গ্রামের কৃষক বিহারি রায় ২০ শতক জমিতে চাষ করেছেন সুপার ফুড কিনোয়া।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ‘কিনোয়া’ দানাদার খাদ্যশস্য। এতে প্রচুর অ্যামিনো অ্যাসিড, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল, পটাশিয়াম ও আয়রন থাকায় নাসার মহাকাশচারীরা এটি খেয়ে থাকেন।

গ্লাইসেন ইনডেক্স কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি উপকারী। এতে ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ প্রোটিন আছে। ওজন কমাতেও এটি সহযোগিতা করে। সবজি হিসেবেও কিনোয়া বেশ সুস্বাদু। পোলাও, খিচুড়ি হিসেবে খাওয়া যায়। আবার সালাদ, স্যান্ডউইচে ব্যবহার করা যায়। রান্না করলে এই খাবার পরিমাণে চারগুণ বৃদ্ধি পায়। পেটে দীর্ঘ সময় থাকে। স্থানীয়ভাবে চাষ হওয়া কাউনের বিকল্প হিসেবে কিনোয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

পাশাপাশি চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে অধিক পরিমাণে পুষ্টিগুণ। মেক্সিকোসহ ইউরোপের দেশগুলোতে চিয়া একটি ওষুধি ফসল হিসেবে চাষ হয়। সেখানকার প্রাচীন আদিবাসী অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকায় থাকা চিয়া সিড বা বীজকে তারা সোনার থেকেও মূল্যবান মনে করত। তারা বিশ্বাস করত এটা তাদের শক্তি ও সাহস জোগাবে। চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক এবং ক্যাফিক অ্যাসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে চিয়া সবধরনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত।

কৃষক শাহজাহান মিয়া বলেন, এবার ২০ শতাংশ জমিতে বাউ চিয়া এবং ১২ শতাংশ জমিতে সুপার ফুড কিনোয়া চাষ করেছি। ফসলও আশানুরূপ হয়েছে। বাজারে সুবিধা পেলে আগামীতে আরো বেশি জমিতে এ ফসল চাষ করব।আরেক কৃষক বিহারি রায় বলেন, কৃষি অফিসার উৎসাহ দিয়েছেন এই ফসল আবাদের জন্য। বীজ এনে দিয়েছেন। সেটি লাগিয়েছি। দামি ফসল এটি। আবাদে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, এই ফসল দুটি উদ্ভাবনের পর যে চার-পাঁচটি উপজেলায় আবাদ হচ্ছে, তার মধ্যে কিশোরগঞ্জ একটি। বীজ এনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে এখানে দুই কৃষককে দিয়ে আবাদ শুরু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এগুলো পুরোপুরি নতুন শস্য। চাহিদা রয়েছে অনেক। সুপার শপে ছয়শ’ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়। রোগবালাই, পরিচর্যা কম বা অন্য ফসলের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ।

উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, পুষ্টিপরিপূরক আর অধিক মানসম্পন্ন হওয়ায় বহির্বিশ্বের সুপারফুড দুটির চাহিদা অনেক বেশি। আশা করি আমাদের দেশে যদি এটি চাষ হয় তাহলে দেশের পুষ্টির অভাব দূর হবে। যেহেতু এই চাষাবাদ প্রক্রিয়া অনেক সহজ। এছাড়া তিন মাসেই ঘরে ফসল তোলা সম্ভব। তাই আমরা সামনে যেন এই চাষের পরিধি বৃদ্ধি পায় সে বিষয়ে কাজ করছি।

তিনি বলেন, যেহেতু এই খাদ্য বা চাষাবাদ বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। তবে বিভিন্ন সুপার সপে এর চাহিদা রয়েছে। এটি বাজারজাতকরণে আমরা যোগাযোগ করছি।

মন্তব্য

Beta version