-->
শিরোনাম

ঘুড়ে দাঁড়িয়েছেন মোহসিনা

মোহাম্মদ বিল্লাল হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ
ঘুড়ে দাঁড়িয়েছেন মোহসিনা

যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় স্বামীর দেওয়া এসিডে ঝলসে যায় মুখ। এর দুই বছর পর আবার বিয়ে করলে সেখানেও জীবন সুখের হয়নি। দুই মেয়েকে রেখে চলে যায় স্বামী। শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। সংসার চালাতে বেছে নেন সেলাই মেশিন। আর সেই মেশিনেই ঘুরতে থাকে ভাগ্যের চাকা। বলছি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ব্রামন্ধী ইউনিয়নের বইলারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মোহসিনার কথা। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করায় জেলার শ্রেষ্ঠ ‘জয়িতা সম্মননা’ পেয়েছেন তিনি।

সেলাই মেশিনের মাধ্যমে দুই মেয়েকে পড়াশোনার পাশাপাশি সংসার চালান মোহসিনা। তিনি আশা করেন, এ উপজেলার এসিডে দগ্ধ নারীদের পাশে সংশ্লিষ্টরা দাঁড়াবে। এতে তাদের জীবনের পরিবর্তন ঘটবে। মোহসিনা বেগম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমার বাবা ছোটবেলায় মারা গেছেন। মা কাজ করে তিন ভাই-বোনকে বড় করেছেন। ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ভাইয়েরা আমাকে গ্রামের জাকারিয়ার সাথে বিয়ে দেয়।’ মোহসিনা আরো বলেন, বিয়ের এক বছরের মাথায় যৌতুকের জন্য আমার স্বামী মারধর করত। একদিন ঘুমের মধ্যে ঘরের উপরের আড়ার ফাঁকা দিয়ে আমার ওপর এসিড মারে স্বামী। এতে আমার মুখ আর মাথা পুড়ে যায়। এরপর আড়াইহাজার হাসপাতালে ভর্তি হই। কারণ তখন কেউ ছিল না যে আমাকে ঢাকা নিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ৮ থেকে ১০ বছর আগে ঢাকার বনানীর একটা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। সেখান থেকেই আমাকে সেলাই মেশিন দিয়েছে। এরপর থেকে কাজ করছি। সেলাই মেশিনে কাপড় তৈরির পর তা বিক্রি করে দুটি মেয়ের পড়ালেখা করিয়েছি। আমার বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, ছোট মেয়ে অষ্টম শেণিতে পড়ার পড় এখন মাদ্রাসায় পড়ে। নানা সংকটের কথা তুলে ধরে মোহসিনা বলেন, আগে গাউছিয়া থেকে কাপড় এনে এখানে বানিয়ে বেচতাম। এখন পুঁজি নাই তাই আর বেচতে পারি না। এখন মানুষের অর্ডার থাকলে অল্প স্বল্প কা

পড় বানাই। পুঁজি থাকলে কাপড় বানিয়ে বেচতাম। একটা মুদি দোকান দেওয়ার চিন্তাও ছিল কিন্তু টাকার জন্য পারিনি। এখন কোনোমতে সংসার চালিয়ে বেঁচে আছি। প্রশাসনসহ সবার কাছে সহযোগিতার দাবি জানিয়ে মোহসিনা বলেন, সরকার যদি সাহায্য করত তাহলে কাপড় বানিয়ে বিক্রি করতে পারতাম। আড়াইহাজার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বলেন, নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করা মোহসিনা আড়াইহাজারের প্রতীক। তিনি অত্যন্ত গরিব। তারপরও নিজের পরিশ্রমে সেলাই মেশিন চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এজন্য তাকে জেলার শেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। তাকে আমাদের সবার সহযোগিতা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি তার মতো আরো যারা আছেন তাদেরকেও সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিস বলেন, যারাই এসিডে দগ্ধ বা সামাজিকভাবে নির্যাতিত নারী আছেন, আমাদের কাছে তাদের তথ্য আসামাত্রই তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আড়াইহাজারের মহসিনা তার জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে তিনি জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন। তার মতো এসিডে দগ্ধ যেসব নারীরা নারায়ণগঞ্জে রয়েছেন তাদের প্রয়োজনে কর্মসংস্থান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

মন্তব্য

Beta version