-->

এবারো শঙ্কায় গদখালির ফুলচাষিরা

এইচআর তুহিন, যশোর ব্যুরো
এবারো শঙ্কায় গদখালির ফুলচাষিরা
গদখালির সৈয়েদপাড়া গ্রামের ফুলের বাগানে কাজ করছেন দুই নারী। ছবি ভোরের আকাশ

করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারও শঙ্কায় রয়েছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালির চাষিরা। ফুলচাষিরা সাধারণত বিভিন্ন দিবসের দিকে চেয়ে থাকে না। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০-২১ সালে তারা ভালো ব্যবসা করতে পারেননি। এবছর আসছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ ও আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস ঘিরে চাষিরা আশার আলো দেখছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে সে স্বপ্ন ভেঙে গেছে। জনসমাগমে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় তারা শঙ্কায় রয়েছেন।

দিবসগুলো উপলক্ষে এবার ফুলের এ রাজধানী থেকে ৪০ কোটি টাকার বাণিজ্যের টার্গেট করেন ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। যা গত বছরের চেয়ে ৮ কোটি টাকা বেশি। সারাদেশে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে যে ফুল বেচাকেনা হয় এর অন্তত ৭০ ভাগই যশোরের গদখালি-পানিসারায় উৎপাদিত হয়। এবার ফুলের উৎপাদন বেশি। তাই গদখালির ফুল দিয়ে বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। কিন্তু করোনার কারণে উৎপাদিত ফুল বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি কামাল হোসেন জানান, চোরাপথে ফুল আমদানি হওয়ায় ফুলের বিক্রিমূল্য কম হচ্ছে। ফলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবু আসন্ন বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে এবার চাষিরা ৪০ কোটি টাকা ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। কিন্তু ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ ও একুশে ফেব্রæয়ারিতে আশানুরূপ ফুল বিক্রি হবে কি না শঙ্কায় আছি।

গদখালির পটুয়াপাড়া গ্রামের উবায়দুল জানান, অনুক‚ল আবহাওয়া ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের নজরদারিতে এবার ফুলচাষ ভালো হয়েছে। কিন্তু ঠিকমতো বিক্রি করতে পারব কি না বুঝতে পারছি না। তবে তিনি অভিযোগ করেন, ফুলহাটে ইজারাদারের বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে কখনো কখনো ফুলের বাজার অস্থিতিশীল হয়। এ সমস্যা সমাধানে তিনি প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সৈয়েদপাড়া গ্রামের রমজান আলী জানান, গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ফুল উৎপাদন খরচ বেড়েছে। শ্রমিক খরচ, চারার দ্বিগুণমূল্য, সার-কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় এবার ফুলের দাম একটু বেশি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, খুলনা ছাড়াও দেশের ছোটবড় এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে আসেন। কিন্তু বিধিনিষেধকালে তারা ফুল কিনতে আসবেন কি না দ্বিধায় আছি।

কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দীপঙ্কর দাস জানান, এবারো গদখালিতে ফুলের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। ২০২০ সালে যে পরিমাণ টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে, এবছর তা অতিক্রম করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এবছর ৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আগামী দুইদিনের মধ্যে ১৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট রয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আরো ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। তবে করোনার কারণে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটতে পারে।

কৃষি কর্মকর্তা মাসুম হোসেন পলাশ জানান, উপজেলার গদখালিতে এবার প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমি ফুলের আবাদ করা হয়েছে। করোনা ও আম্পানে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার তারা সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন। যশোর শহর থেকে পশ্চিমের উপজেলা ঝিকরগাছা ও শার্শার ৭৫টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল।

তিনি আরো জানান, ২ উপজেলার গ্রামগুলোর রাস্তার দুইপাশের জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার দেখা যায়। প্রতিদিন পানিসারার শত শত ফুলচাষির আনাগোনা শুরু হয় গদখালির বাজারে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোটবড় পাইকাররাও সেখান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যান। এরপর বিভিন্ন হাতবদল হয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ফুল ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।

প্রসঙ্গত ভারতীয় বন্ধু রমেশ, সাতক্ষীরার আমজেদ, যশোরের নুর ইসলামের সহযোগিতায় ১৯৮৩ সালে গদখালিতে প্রথম ফুলচাষ শুরু করেন শের আলী সরদার। তখন স্বল্পপরিসরে ফুল বিক্রি শুরু হলেও এখন তা দেশ পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে এখানকার ৫ হাজার কৃষক ফুলচাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

মন্তব্য

Beta version