-->
শিরোনাম

৫ কিলোমিটারের পথ ঘুরতে হয় ৩৫ কিলোমিটার

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
৫ কিলোমিটারের পথ ঘুরতে হয় ৩৫ কিলোমিটার
ব্রিজ আছে, অ্যাপ্রোচ সড়কে মাটি নেই

নির্মাণের পর থেকেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে নেত্রকোনার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের খুরাইখালী খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি। ব্রিজের দুপাশে অ্যাপ্রোচ সড়কে মাটি না থাকায় তা ব্যবহার করতে পারছে না এলাকাবাসী। এ অবস্থায় ব্রিজ এলাকার দুটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

মূলত হাওড় উপজেলা মদনের ফতেপুর ও তিয়শ্রী ইউনিয়নের গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা সুগম করতে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দুপাশে অ্যাপ্রোচ সড়ক না করায় ৮ বছর ধরে ব্রিজটি এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না। আর এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় মদন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২৬ লাখ ২ হাজার ৩৬ টাকা ব্যয়ে দৌলতপুর-বারেউড়া সড়কের খুরাইখালী খালের ওপর ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। ব্রিজটি নির্মাণের পর থেকে দুই পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কে মাটি না থাকলেও সেদিকে দৃষ্টি পড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দৌলতপুর-বারেউড়া সড়কটি তিয়শ্রী ও ফতেপুর ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের সংযোগ সড়ক। দুই কিলোমিটার সড়ক প্রায় ২৫ হাজার মানুষের মধ্যে যোগাযোগের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এ সড়কপথে চলাচলের সুবিধার্থে খুরাইখালী খালের ওপর ওই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দুপাশে অ্যাপ্রোচ সড়কের মাটি না থাকায় ব্রিজ নির্মাণ হলেও এর সুফল ভোগ করতে পারছে না স্থানীয়রা। ব্রিজের ওপর দিয়ে সকল প্রকার যানবাহনসহ পথচারীদের চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এ অবস্থায় এলাকার লোকজন বাধ্য হয়ে ব্রিজটির পাশে থাকা ফসলরক্ষা বাঁধের স্লুইস গেট দিয়ে যাতায়াত করছে এবং স্লুইস গেঁটির ওপর দিয়ে যান চলাচল করায় গেটটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয় দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল মিয়া বলেন, ‘খুরাইখালী খালের ওপর ব্রিজটি নির্মাণ হলেও সেটা আমাদের কোনো কাজে আসছে না। কারণ ব্রিজ আছে, কিন্তু দুপাশে অ্যাপ্রোচ সড়কে মাটি নেই। এতে চলাচল করতে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’ অবিলম্বে ব্রিজটির অ্যাপ্রোচ সড়কে মাটি ভরাট করে তা ব্যবহারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

স্থানীয় অটোরিকশাচালক কাশেম মিয়া বলেন, ‘বারেউড়া থেকে কালীবাড়ি মোড়, বালালী বাজার ও তিয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটি। ব্রিজের দুপাশে মাটি না থাকায় গাড়ি নিয়ে যেতে পারি না। তাই ব্রিজের পাশের স্লুইস গেট দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তবে বর্ষা মৌসুমে মদন হয়ে তিয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পাঁচ কিলোমিটারের জায়গায় ৩৫ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়।’

স্থানীয় তিয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফখরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ দৌলতপুর-বারেউড়া সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু খুরাইখালী খালের ব্রিজটি যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতে না পারায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। লোকজনের যাতায়াতের সুবিধার্থে ব্রিজটির অ্যাপ্রোচ সড়কের মাটি ভরাটের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

মদন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শওকত জামিল জানান, খুরাইখালী ব্রিজটির দুপাশের অ্যাপ্রোচ সড়কের মাটি সরে গেছে। তাই ব্রিজটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। এ বছর প্রাপ্ত বরাদ্দ থেকে ব্রিজটির অ্যাপ্রোচ সড়কের মাটি ভরাট করা হবে।

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ জানান, ত্রাণের অধিকাংশ ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়কের মাটি নেই। উপজেলার যে ব্রিজগুলোর অ্যাপ্রোচের মাটি নেই, সেগুলোর তালিকা করে অচিরেই মাটি ভরাট করা হবে।

মন্তব্য

Beta version