চলাচলের ২৭ বছরেও নানা জটিলতায় আধুনিক হয়নি বরিশাল বিমানবন্দর। পাশাপাশি আশানুরূপ বাড়েনি যাত্রীসেবার মান। এদিকে বিমানবন্দর এলাকায় নদীভাঙন, ত্রুটিপূর্ণ বাউন্ডারি দেয়াল, গ্রেড অনুযায়ী রানওয়ে না থাকা এবং নাজুক টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের কারণে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, গত ৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহম্মেদ কায়কাউস বরিশাল সফরকালে বিমানবন্দরের নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বিমানবন্দরের মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। এরপরই নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এমনকি জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিমানবন্দরে পরিদর্শন এসে নানা ঝুঁকি খুঁজে পান বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) গঠিত পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা। পরিদর্শন শেষে ১৩ জানুয়ারি বিমানবন্দরের বিভিন্ন ঝুঁকি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে বরিশাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বেবিচকের গঠিত পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা ‘ইন্সপেকশন রিপোর্ট অব বরিশাল এয়ারপোর্ট’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিশাল বিমানবন্দরের এয়ারড্রোম ম্যানুয়াল, ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (ইওসি), আইসোলেটেড এয়ারক্রাফট পার্কিং বে, এয়ারড্রোম ফুল স্কেল ফায়ার ড্রিল, ডিজঅ্যাভল এয়ারক্রাফট রিমোভাল প্ল্যান, রানওয়ে টিএইচআর ও সেন্ট্রাল লাইন মার্কিং কিংবা অ্যাপ্রোন মার্কিং কোনোটাই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোয় অগ্নিনির্বাপণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত নেই, বিমাবন্দরের নিরাপত্তা দেয়াল ভেঙে গেছে, বিমানবন্দরের চারদিকের নিরাপত্তামূলক বাতিগুলো পড়ে আছে অকার্যকর অবস্থায়।
এ কারণে পর্যবেক্ষণ কমিটি সিভিল অ্যাভিয়েশন অনুমোদিত বিধি অনুযায়ী সেগুলো দ্রæত স্থাপনের সুপারিশ করেছে বেবিচক গঠিত পরিদর্শন কমিটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দর এলাকায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা তোয়াক্কা না করে আশপাশের এলাকার মানুষ অবাধে ঢুকে পড়ছেন। কেউ কেউ বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশের জমি থেকে ঘাস কেটে নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ আবার গরু-ছাগল চরাচ্ছেন।
এ ছাড়া বিমানবন্দরের দেয়াল মই দিয়ে টপকে এবং দেয়ালের নিচের ফাঁকা দিয়ে পশ্চিমাংশ এলাকার মানুষ পূর্বপাশের বাজার ও দোকানপাটে যাতায়াত করছেন।
মো. মাসুম হোসেন নামে এক যাত্রী জানান, তিনি প্রায়ই অফিসিয়াল কাজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যান। বিশেষ করে ঢাকায় জরুরি কাজ পড়লে বিমানেই যেতে হয়। কিন্তু বরিশাল বিমানবন্দরে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবা। এমনকি ফ্লাইট বিলম্বিত হলেও বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের ঘোষণাও দেওয়া হয় না। গত মাসে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে সকাল ১০টায় ইউএস বাংলার ফ্লাইটে যাওয়ার কথা থাকলেও সেই ফ্লাইট ছেড়ে যায় বেলা ২টার দিকে। এই মেসেজটিও দেওয়া হয়নি।
ঊরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘বরিশাল বিভাগ তথা দক্ষিণাঞ্চলে নানামুখী উন্নয়ন করছে আওয়ামী লীগ সরকার। এখানে নির্মিত হয়েছে দেশের গভীরতম পায়রা সমুদ্রবন্দর। পাশাপাশি গড়ে উঠছে ছোট মাঝারি ও বড় বড় শিল্পকারখানা। এতে করে সব রুটে যাত্রী সাধারণের চাপ বাড়ছে। দ্রুত ব্যবসায়ী কাজ সম্পন্ন করতে জনপ্রতিনিধিদের আকাশপথে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ছে। ফলে দিনের বেলার মতো রাতেও বিমান সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু বিমানবন্দরে আবহাওয়া স্টেশন না থাকায় দিনের বেলাতেই ঝুঁকি থাকছে। সে ক্ষেত্রে রাতে ঝুঁকি আরো বাড়ছে। তাই বরিশাল বিমানবন্দরকে আরো আধুনিক করা উচিত। বাড়ানো উচিত যাত্রীসেবা।’
বেসরকারি বিমান সংস্থার বরিশাল স্টেশন ইনচার্জরা জানান, বরিশাল বিমানবন্দর এলাকায় নানা ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে বিমান চলাচল করছে। অনেক সময়ই পাইলটরা সমস্যায় পড়েন। তারা সতর্ক থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে না। কিন্তু বিমানবন্দরের সব ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আ. রহিম তালুকদার বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে বরিশাল বিমানবন্দরে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। ঝুঁিকগুলো খুঁজে সমাধানের চেষ্টা চলছে। এগুলো সমাধান করলে বরিশাল বিমানবন্দর আধুনিক বিমানবন্দরে পরিণত হবে।’
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘বরিশাল বিমানবন্দরের ঝুঁকির বিষয়টি ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিমানবন্দর এলাকা নদীভাঙনের ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি দ্রæত বিমানবন্দরের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে।’
মন্তব্য