আসবে বিদ্যুৎ, মিটবে আক্ষেপ

জুয়েল রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
আসবে বিদ্যুৎ, মিটবে আক্ষেপ
আশুগঞ্জ শহর থেকে নৌকায় এসে চরসোনারামপুর গ্রামে যেতে হয়। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে এ চরের অধিকাংশ মানুষ। ছবি ভোরের আকাশ

আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চরসোনারামপুর গ্রামের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। বিদ্যুতের এত কাছে থেকেও এই চরের মানুষের বিদ্যুৎ না পাওয়ার আক্ষেপ চার দশকেরও বেশি সময়ের। এ যেন ‘বাতির নিচে অন্ধকার’। বিদ্যুৎ আসবে' এই আশাতেই কেটে গেছে বহু বছর। কিন্তু সে স্বপ্ন আর সত্যি হয় না।

তবে এবার অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে। মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের মাধ্যমে চরে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে নদীর দুই প্রান্তে ১১ হাজার ভোল্টের প্রয়োজনীয় ওভারহেড লাইন নির্মাণ করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের মেঘনা নদীর বিওসি ঘাট থেকে নদীর তলদেশ দিয়ে ১১ হাজার ভোল্ট সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল এইচডিডি পদ্ধতিতে স্থাপন করা হবে। এ কাজের জন্য গত ৩০ জানুয়ারি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রিলটেক ইন্টারন্যাশনালের চুক্তি হয়েছে। পুরো কাজের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি টাকা।

চরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শত বছর আগে মেঘনা নদীর বুক চিড়ে জেগে ওঠা এই চরে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মানুষজন বসবাস করছেন। আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের এ চরটির নামকরণ করা হয় চরসোনারামপুর। বর্তমানে চরের এই গ্রামটিতে প্রায় ছয় হাজার মানুষের বসবাস। মূলত মেঘনা নদীতে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন চরের বাসিন্দারা। অবশ্য কেউ কেউ আবার বিভিন্ন ব্যবসাও করছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১১টি ইউনিট উৎপাদনে রয়েছে। এসব ইউনিট থেকে প্রতিদিন দেড় হাজারেরও বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয় জাতীয় গ্রিডে। ফলে আশুগঞ্জকে বলা হয় বিদ্যুতের শহর। কিন্তু এই বিদ্যুতের শহরে বাস করেও দীর্ঘ চার দশকে বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি চরসোনারামপুরে। অথচ গত ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

চরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতের জন্য গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পেলেও বিদ্যুতের জন্য সবসময়ই হাহাকার ছিল চরবাসীর। বিশেষ করে গরমকালে বিদ্যুতের জন্য সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অবশ্য সরকারিভাবে বিদ্যুৎ না পেলেও চরের বাসিন্দাদের মধ্যে যারা অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা সচ্ছল, তারা নিজ উদ্যোগে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু ঝড়বৃষ্টির সময় সৌরবিদ্যুৎ নিয়েও দুর্ভোগের অন্ত থাকে না তাদের।

অবশেষে এবার চরসোনারামপুরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানোর কাজ শুরু হচ্ছে। মেঘনার তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। এ জন্য ১২ ফেব্রæয়ারি থেকে প্রয়োজনীয় মালামাল মেঘনা নদীর বিওসি ঘাটে এনে মজুদ করা শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে চরসোনামপুরবাসীর দীর্ঘ চার দশকের আক্ষেপ ঘুচতে যাচ্ছে।

চরসোনারামপুর গ্রামের বাসিন্দা শীতল বর্মণ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বছরের পর বছর কেটেছে শুধু বিদ্যুতের আশায়। বিদ্যুতের জন্য আমাদের দুঃখের শেষ নেই। ছেলেমেয়েদের মোমবাতি-কুপি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। এখন যদি আমরা বিদ্যুৎ পাই, তা হলে আমাদের আর কোনো দুঃখ থাকবে না।’

চরের আরেক বাসিন্দা সুমন দাস জানান, বিদ্যুতের জন্য তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। এখন বিদ্যুৎ পাওয়ার খবরে চরবাসী অনেক আনন্দিত। দ্রæত সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপন কাজ শেষ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আশুগঞ্জ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘চুক্তিপরবর্তী ১২০ দিনের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় মালামাল আসা শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপনের কাজ নির্ধারিত সময়েই শেষ করবে। আর কাজ শেষ হওয়ার পরপরই চরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া শুরু হবে।’

 

 

মন্তব্য