টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বংশাই নদীর ওপর এলাকাবাসীর দাবিতে নির্মিত হয়েছিল একটি ব্রিজ। ব্রিজ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ছয় বছরেও দুই পাশের সংযোগ সড়ক হয়নি। এতে দুর্ভোগে এলকাবাসী। বারবার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালেও গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর।
শুষ্ক মৌসুমে ব্রিজের দুই পাশে কাঠের মই দিয়ে ওঠানামা করতে হয়। কিন্তু বর্ষাকালে এই চলাচল বন্ধ থাকে। ব্রিজটি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নের ধোপাখালী বাজারসংলগ্ন বংশাই নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়।
এলাকাবাসী বলেন, ব্রিজের এপারে ধোপাখালী, ওপারে যদুনাথপুর ইউনিয়ন। ব্রিজটি নির্মাণের পর থেকেই কোনো কাজে আসছে না দুই ইউনিয়নের আট থেকে দশ গ্রামবাসীর। বিগত কয়েক বছরে বিষয়টি উপজেলা এলজিইডি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানালেও কোনো কাজে আসেনি। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এলাকাবাসীরা জানান, সান্ত¡নাস্বরূপ এ ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনই ছিল না। তাই কর্তৃপক্ষেও কাছে এটি ভেঙে ফেলার দাবি তাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাটি থেকে প্রায় নয়-দশ ফুট উচ্চতায় ব্রিজটি। দুপাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় কাঠের মই বেয়ে ওঠানামা করছে এলাকাবাসী। এতে করে ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রামের কৃষক মাথায় ও কাঁধে করে উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে যাচ্ছেন এপার থেকে ওপারে। চলাচলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে মহিলা ও শিশুদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এডিপির অর্থায়নে স্থানীয় এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজটি নির্মাণ করে।
যদুনাথপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মীর ফরিদ আহমেদের সময় ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। সে সময় কোনোরকমে মাটি ফেলে সংযোগ সড়ক করা হয়। বর্ষার পানি নদীতে আসার পরপরই সড়কের মাটি ধসে যায়। ইসলামপুর গ্রাম থেকে উপজেলা সদরে যেতে ভাড়া ও সময় লাগে অনেক বেশি। ধোপাখালীর ওই পারেই স্থানীয় বাজার। সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে চলাচল করা যায় না এই ব্রিজ দিয়ে। বর্ষার সময় স্কুলপড়–য়া সন্তানরা ওপারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। নৌকায় চলাচল করতে হয়।’
ধোপাখালী গ্রামের বাসিন্দা সেকান্দর আলী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি বারবার জানাইছি। কোনো কাজ হয়নি। কেউ গুরুত্ব দেয় না। তাদের কাছে গেলে শুধু কয় দেখতাছি। এ ব্রিজ থাকলেও যা, না থাকলেও তাই। এ ব্রিজ দিয়া আমরা কি করমু?’
ধোপাখালী ইউনিয়নের ধোপাখালী গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভাবছিলাম ব্রিজটি আমাদের অনেক উপকারে আসবে। এটা শুধু নামে মাত্র। এলাকার মানুষ কৃষিকাজ কইরা জীবন চালায়। আমগর দুক্কু (দুঃখ) দেখার মানুষ কেউ নাই।’
কৃষাণী শাহিনা বেগম বলেন, ‘কয়েক বছর আগে লোকজন আইসা ব্রিজটি দেইখা গেছে। তারা কইছে রাস্তা তাড়াতাড়ি হবে। মন চাইলে রাস্তা করলে করুক, না চাইলে না করুক।’
ধোপাখালী ইউপির স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তাটির ব্যাপারে আমি একাধিকবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে বলেছি। তিনি করে দিতে চেয়েছেন। এরপর আর কোনো খোঁজ নেননি। যদি এই সংবাদ প্রকাশ করে এলাকার জনদুর্ভোগ দূর হয়, তা হলে খুবই উপকার হবে। এ জন্য আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।’
জানতে চাইলে ধোপাখালীর চেয়ারম্যান আকবর হোসেন বলেন, ‘এ বছরই রাস্তাটি করে দেওয়া হবে। যদুনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।’ ধনবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন সাগর বলেন, ‘দুর্ভোগ এড়াতে এই বছরই সংযোগ সড়ক করে দেওয়া হবে।’
মন্তব্য