ডাইভার্সন রাস্তায় নয়ছয়

উদ্বোধনের পরই ভেঙে পড়ল নামফলক

জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল
উদ্বোধনের পরই ভেঙে
পড়ল নামফলক
ভেঙে যাওয়া সেতুর নামফলক। ছবি ভোরের আকাশ

সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। তবে এর আগে মানুষের চলাচলের জন্য ডাইভার্সন রাস্তার কাজ করার কথা। মূল সড়কের মাটি কেটে ফেলা হয়েছে ডাইভার্সনে। নির্ধারিত পরিমাণ উচ্চতাও করা হয়নি। ইটের সলিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। সেতু নির্মাণের আগেই ভেঙে পড়েছে নামফলকও। এমনকি ডাইভার্সনে ব্যবহার করা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ভাড়া পরিশোধ না করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এসব তারা তা স্বীকারও করছে। এ নিয়ে কথা বললে কাজ দেরিতে হবে বলে জানিয়েছে তারা।

ঘটনাটি টাঙ্গাইলের বাসাইলের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ছনকাপাড়া এলাকার। নির্মাণাধীন সেতুটির ডাইভার্সনের পুরো কাজ শেষ না করে সেতুর কাজ শুরু করাকে কেন্দ্র করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আব্দুল জলিল সরকারের (জেভি) বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা প্রকৌশল অফিস থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের বন্যার পানির তোড়ে ছনকাপাড়ার এ সেতুটি ভেঙে যায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ওই স্থানে বিশ্বব্যাংক এবং জিওবির অর্থায়নে ৩ কোটি ৭২ লাখ ২ হাজার ৯৬৩ টাকা ব্যয়ে ৩৫ মিটারের একটি সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেতু নির্মাণের আগে ১০০ মিটার ডাইভার্সন নির্মাণের জন্যও প্রকল্পে ধরা হয়। ডাইভার্সনের নিচে ৩০ ফুট এবং ওপরে ১২ ফুট প্রস্থ ধরা হয়েছে। ডাইভার্সনের কাজে ৪০ হাজার ঘনফুট মাটি বাবদ ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২৫৯ টাকা, ১০ ফুট প্রস্থ ও ৩৩০ ফুট দীর্ঘ সলিং বাবদ ১ লাখ ৩৯ হাজার ৮৭৮ টাকা এবং এইচবিবি বাবদ ২ লাখ ১৮ হাজার ২৮৩ টাকা বরাদ্দ ধরা রয়েছে।

ধাপে ধাপে এসব টাকা বরাদ্দ ধরা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডাইভার্সনের কাজ বাদ রেখে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন ১০ থেকে ১২ গ্রামের বাসিন্দারা।ওই সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান মো. রাজীব মিয়া। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় তো মাটিই ফেলেনি। ইটের রাস্তা করবে বলে শুনেছিলাম, এখন তো দেখি মাটির রাস্তা।’

কাঞ্চনপুর পশ্চিমপাড়ার জাকির বলেন, ‘রাস্তার মাটি কেটে ডাইভার্সন রোডে ফেলা হয়েছে। ইটের সলিংয়ের খবর নেই। কোনোরকমে ৪০-৫০ হাজার টাকার মাটি ফেলা হয়েছে। ডাইভার্সনের অধিকাংশ অংশই কাদায় পূর্ণ। প্রকৌশল অফিস, সাংবাদিকদের এসব অভিযোগ জানানোর কথা বললে ঠিকাদার অশুভনীয় ভাষা ব্যবহার করে গালিগালাজ করেন।’

স্থানীয় কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন আলাল বলেন, ‘এমপি মহোদয় উদ্বোধন করে যাওয়ার পরই বাতাসে নামফলক ভেঙে পড়ে গেছে। ঠিকাদারের কাজের ‘নয়ছয়’-এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে?’ডাইভার্সনের রাস্তা হয়েছে ছনকাপাড়ার শারীরিক প্রতিবন্ধী কৃষক মুস্তাকিন মিয়ার জায়গায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার এটুকু জমিই আছে। এতে বোরো আবাদ করে সারা বছরের খাবার জোটে। রাস্তা নেওয়ার জন্য বোরো আবাদ করতে পারি নাই। এই জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নেওয়ার সময় ঠিকাদার কিছু ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিল। এখন বিভিন্ন টালবাহানার কথা বলে।’বাসাইল উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল জলিল বলেন, ‘শিগগিরই ডাইভার্সনের কাজ শুরু করা হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র বলেন, ‘নিয়মনীতি মেনে সব কাজ করা যায় না। ডাইভার্সন ধরা আছে ১০০ মিটার, সেখানে ১৮০ মিটার করতে হচ্ছে। তাই কাজটি করতে বিলম্ব হচ্ছে। হয়রানি-পেরেশানি কইরেন না, যত ঝামেলা করবেন কাজ করতে তত দেরি হবে।’

মন্তব্য