আলুর বস্তার ওজন নিয়ে বিপাকে হিমাগার মালিকরা

তারেক মাহমুদ, রাজশাহী ব্যুরো
আলুর বস্তার ওজন নিয়ে বিপাকে হিমাগার মালিকরা
ফাইল ছবি

শ্রম আইন অনুযায়ী একজন শ্রমিক সর্বোচ্চ ৫০ কেজি ওজনের বস্তা বহন করতে পারবেন। এর বেশি ওজনের বস্তা বহনকে সরকার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনাও রয়েছে। এই নির্দেশনা আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা মানতে নারাজ। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হিমাগার মালিকরা।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের রাজশাহী উপমহাপরিদর্শকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই আইন বাস্তবায়নের জন্য ১০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হিমাগার মালিক, ব্যবসায়ী ও আলু চাষিদের প্রায় ২০০ জনকে নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো হিমাগারে ৫০ কেজির বেশি ওজনের বস্তা রাখা যাবে না। তাহলে শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান রয়েছে।

এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা রোববার বিকেলে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জেলার সব আলু চাষিরা সমাবেশ করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন চাষিদের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা কেউই আইনের বাইরে নই। আইনকে আমাদের অবশ্যই সম্মান করতে হবে। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকেও সহযোগিতা করতে হবে। আমি কথা দিচ্ছি, বিশেষ করে এবার কোনো হিমাগারে প্রতি বস্তায় ৬৫ কেজি আলু মজুত রাখলে ভ্রাম্যমাণ আদালত ধরবেন না। কারণ, আইন মানুষের জন্য।’

কৃষকের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘চাষি ও ব্যবসায়ীরা আলু রাখার বস্তাসহ আনুষাঙ্গিক কাজ সেরে ফেলেছেন। তাই আগের নিয়মেই আলু নেওয়ার জন্য হিমাগার মালিকদের প্রতি আহ্বান জানাই।’

কয়েকজন আলুচাষি বলেন, আলু লাগানোর শুরুতে প্রতি বস্তার আলুর ওজন ও নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে চুক্তি করেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু প্রায় প্রতিবছরই হিমাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো না কোনো কারণে বিপত্তি বাধে। হিমাগারের মালিকপক্ষ নানান অজুহাত দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে থাকেন।

কৃষকের সমিতি নেই। তাই তাঁরা যেভাবে পারেন কৃষকের কাছে থেকে মুনাফা আদায় করেন। তবে তাঁদের কিছু নির্ধারিত দালাল চাষি ও ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাঁরাও কৌশলে চাষিদের কথা বলে নিজেদের আখের গোছানোয় ব্যস্ত থাকেন।

রাজশাহী জেলা হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিকদের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে হাইকোর্ট একটা রায় দেন। এতে বলা হয়, ৫০ কেজি ওজনের বেশি বস্তা একজন শ্রমিক বহন করতে পারবেন না।

‘২০১৮ সাল থেকে এই আইন কার্যকর করার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে তাঁদের বলা হচ্ছে। এ আইন অমান্য করলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। কিন্তু এরপর আবার আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা ৭০-৭৫ কেজির বস্তা আনা শুরু করেন। এ নিয়ে তাঁরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।’

ফজলুর রহমান আরও বলেন, ‘রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় তিনি বলেছিলেন, কাঁচামাল শুকিয়ে যায়। তাই প্রতি বস্তায় ৫০ কেজির বদলে ৫৫-৬০ কেজি রাখার সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু চাষি ও ব্যবসায়ীরা অনেকে বস্তায় এর চেয়ে বেশি আলু নিয়ে আসেন।

‘কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতি বস্তা আলুর ভাড়া ২৫০ টাকা রাখা হয়। তবে তাঁরা এর চেয়ে একটু কম ভাড়াই রাখেন’, যোগ করেন তিনি।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের রাজশাহী উপ-মহাপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভায় প্রচলিত আইন সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করা হয়েছে। এই আইন অমান্য করলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শ্রম আদালতে মামলা করা যাবে।’

মন্তব্য