আবারও দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপ অংশে পর্যটকদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে ছেঁড়া দ্বীপগামী লাইফ বোট, স্পিড বোট ও ট্রলার। একই সঙ্গে সড়কপথেও বন্ধ রাখা হয় ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ।
সেন্টমার্টিন স্পিড বোট ও লাইফ বোট মালিক সমিতির সভাপতি মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়ার সব নৌযান বন্ধ রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক আসে ৪ থেকে ৫ মাস পর্যন্ত। এসময় পর্যটকদের ছেঁড়া দ্বীপে ভ্রমণের উপর সংসার চলে কয়েকশ’ স্পিড বোট, লাইফ বোট, ট্রলার চালক ও শ্রমিকদের। কিন্তু এখন ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় এসব মানুষের জীবিকা বন্ধ হয়ে গেল। এখন সরকারের প্রতি আহ্বান, এসব মানুষের যেন বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা হয়।’
এর আগে, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপ অংশে পর্যটকদের যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সেন্টমার্টিনে ছয় ধরনের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা না মেনে দীর্ঘদিন ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণে যান পর্যটকরা। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোনো তদারকিও ছিল না স্থানীয় প্রশাসনের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ছেঁড়া দ্বীপে সকাল থেকে কোনো ধরনের লাইফ বোট, স্পিড বোট ও ট্রলার চলাচল করছে না। আগে প্রতিদিনই ৩০টি স্পিড বোট, লাইফ বোট ও ট্রলার পর্যটকদের নিয়ে ছেঁড়া দ্বীপে ভ্রমণে যেত প্রায় ৩ শতাধিক পর্যটক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপ অংশে এখনও কিছু সামুদ্রিক প্রবাল জীবিত আছে। এসব প্রবাল সংরক্ষণে পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুয়ায়ী, সেন্টমার্টিনের সৈকতে কোনও ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন যেমন মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনচালিত গাড়ি চালানো, রাতে সেখানে আলো বা আগুন জ্বালানো বা রাতের বেলা কোলাহল সৃষ্টি করা যাবে না।
এছাড়া টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাতায়াতকারী জাহাজে অনুমোদিত ধারণ সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। অননুমোদিত এবং অনুমোদনের অতিরিক্ত নির্মাণ সামগ্রীর সেন্টমার্টিনে যাতায়াত বন্ধ করতে হবে। পরিবেশদূষণকারী দ্রব্য যেমন পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করতে হবে। কিন্তু এসবের কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এদিকে সম্প্রতি প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ১৩টি সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়।
এ লক্ষ্যে গত মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দ্বীপ রক্ষায় বেশকিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। তারই সূত্র ধরে, সেন্টমাটিনে সরেজমিনে সুপারিশ বাস্তবায়নে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া ইকোট্যুরিজমসহ দ্বীপকে ঘিরে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা রয়েছে সেটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলছে বর্তমানে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারেভজ চৌধুরী বলেন, ‘সম্প্রতি প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা আসে। এই নির্দেশনা প্রেক্ষিতে সেন্টমার্টিন নিয়ে কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন এবং স্থাপনা নির্মাণ বন্ধসহ দ্বীপ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি আমরা। যার কারণে ছেঁড়া দ্বীপে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে ছেঁড়া দ্বীপগামী সব নৌযান এবং সড়কপথে ইজিবাইক। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত পর্যটকদের ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষেধ।’
পারেভজ চৌধুরী বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রয়েছে। বিভিন্ন ভৌগলিক কারণে এ দ্বীপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে এ দ্বীপটি অতি ঝুঁকিতে। তাই খুব দ্রুত সেন্টমার্টিনকে ভালো ম্যানেজমেন্টের আওতায় আনতে কাজ করছে সরকার।’
মন্তব্য