-->
শিরোনাম

পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে ‘কোকো পিট’ চারা

রিপন দাস, বগুড়া 
পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে ‘কোকো পিট’ চারা
কোকো পিট পদ্ধতিতে পেঁয়াজের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। ছবি ভোরের আকাশ

হরহামেশায় পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা যায় দেশে। যার জন্য প্রতিদিনের রান্নায় ব্যবহৃত এ পণ্যের দাম বেড়ে দাঁড়ায় আকাশচুম্বী। বিপাকে পড়েন নিম্ন আয়ের মানুষ। পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণে কাজ করছেন বগুড়া মসলা গবেষণাকেন্দ্রের একদল বিজ্ঞানী। তারা কোকো পিটের মাধ্যমে পেঁয়াজের চারা উৎপাদনে কাজ করছেন। আর এ গবেষণায় প্রায় শতভাগ সফল হয়েছেন বলে দাবি তাদের। এতে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে আশা করেছেন তারা।

গবেষকদের দাবি, তারা কোকো পিট পদ্ধতিতে প্রতি বর্গমিটারে প্রায় দুই হাজার পেঁয়াজের চারা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। যেখানে সাধারণ বীজতলায় প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ১২০০ চারা উৎপাদন করা যায়। এতে আমদানি ব্যয় কমবে, একই সঙ্গে লাভবান হবেন চাষিরা।

কৃষি গবেষকরা বলছেন, বারি-৫ জাতের পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে পারলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকবে না। কমবে আমদানি ব্যয়। এ জাতের পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ দিনে বিঘায় পাওয়া যাবে কমপক্ষে ১০০ মণ। আর স্থানীয় জাতের পেঁয়াজে সময় লাগে ১১০ থেকে ১২০ দিন। আর বিঘায় সর্বোচ্চ পাওয়া যায় ৬০ মণ।

১৯৯৮ সালে বারি-৫ জাতের পেঁয়াজ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ২০০৮ সালে সফলভাবে এ জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। সারাদেশে এ জাত জনপ্রিয় করতে মসলা গবেষণাকেন্দ্র, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও কাজ করছে।

বগুড়া মসলা গবেষণাকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. নুর আলম চৌধুরী বলেন, ‘কোকো পিটের চারা উৎপাদন সহজ হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন এ পেঁয়াজ সারাবছর চাষ করা সম্ভব। এ ছাড়াও সাথি ফসল (সমন্বিত চাষ) হিসেবে যে কোনো ফসলের পাশাপাশি বারি-৫ জাতের পেঁয়াজ চাষ করা যেতে পারে। এর ফলে একই সঙ্গে একাধিক ফসল উৎপাদন করে কৃষক লাভবান হতে পারবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সঠিক পরিচর্যায় মরিচ, আদা, কচু ও হলুদসহ বিভিন্ন ফসল আর ফল বাগান, এমনকি ছাদবাগানেও এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করা যাবে। এ জাতের একটি পেঁয়াজের ওজন হয় সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ গ্রাম পর্যন্ত।’

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ঘাগুর দুয়ার গ্রামের কৃষক কুতুব উদ্দিন। তিনি কোকো পিটের মাধ্যমে পেঁয়াজের চারা উৎপাদন করেছেন।

তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘কোকো পিটের চারা লাগানোর ৮৫ দিন পর আমি পেঁয়াজ তুলতে পেরেছি। প্রতিটি পেঁয়াজের ওজন হয়েছে ৩শ থেকে ৫শ গ্রাম পর্যন্ত। আমি বারি-২ জাতের মরিচ উৎপাদন করে দেশি জাতের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ফসল পেয়েছি। এতে লাভও বেশি হয়েছে।’

একই উপজেলার ধোন্দাকোলা গরিবপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কলার বাগানে পেঁয়াজ লাগানো হলেও বেশিরভাগ চারা বেঁচে আছে। আর তেমন কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। এ ছাড়া ফলনও যে কোনো জাতের পেঁয়াজের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।’

পেঁয়াজের কোকো পিটের চারা নেওয়ার জন্য বগুড়া মসলা গবেষণাকেন্দ্রে ভিড় করছেন চাষিরা। এ জাতের চারার জন্য রংপুর মিঠাপুকুর থেকে এসেছেন কৃষক মাহাবুব আলম। তিনি বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে একই বেডে ৫-৬ বার পর্যন্ত বীজ লাগানো যায়। এ ছাড়াও শিকড় সহজে মাটি থেকে উঠে আসায় গাছের ক্ষতি হয় না।’

বগুড়া মসলা গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মসলাজাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ‘দেশে প্রতি বছর জমি কমে গেলে স্বাভাবিকভাবে ফসল উৎপাদন কম হবে। আর যেহেতু জমি বাড়ানো সম্ভব হবে না, সে ক্ষেত্রে ফলন বাড়াতে হলে গবেষণার বিকল্প নেই। আন্তঃফসলের সঙ্গে পেঁয়াজ চাষ করে দেশে যে ঘাটতি আছে তা পূরণ করা সম্ভব। পাশাপাশি একজন কৃষক একই জমি থেকে প্রতি বিঘায় দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতি বছর পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যয় হয় কমপক্ষে চার হাজার কোটি টাকা। দেড় লাখ বিঘায় এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করা সম্ভব হলে আমদানি করা লাগবে না। এ জাতের পেঁয়াজকে বাণিজ্যিকভাবে কৃষকপর্যায়ে জনপ্রিয় এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করার গবেষণা চলছে।’

কোকো পিট কি?

নারিকেলের ছোবড়া বা কয়ার থেকে তৈরিকৃত কোকো পিট মাটির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পুরো পৃথিবীতে মাটির বিকল্প হিসেবে কম-বেশি সব দেশেই কোকো পিট ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এটি এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে। ফলনও বাড়ে মাটি থেকে কয়েকগুণ বেশি।

মন্তব্য

Beta version