-->
শিরোনাম
নবাবগঞ্জ উপজেলা

২২ মাসে ৬৪৫ বাল্যবিয়ে

আফজাল হোসেন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
২২ মাসে ৬৪৫ বাল্যবিয়ে

দিনাজপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৬৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নবাবগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। এ উপজেলায় রয়েছে ৯টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে সবশেষ ২২ মাসে ৬৪৫ জনের বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে। যার মধ্যে কিশোর ১৬ জন ও কিশোরী ৬২৯ জন রয়েছে।

বাল্যবিয়ে হওয়াদের মধ্যে ১২-১৩ বছর বয়সি ৩৭ জন, ১৪-১৫ বয়সি ২৬০ জন এবং ১৬-১৭ বয়সি ৩৩২ কিশোরী রয়েছে। আর ১৮-২০ বছর বয়সি ১৬ জন কিশোর রয়েছে। এক জরিপে এ তথ্য জানায় দিনাজপুরের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ড ভিশন। তাদের বাস্তবায়নধীন অ্যাডলোসেন্ট এবং কমিউনিটি ট্রান্সফরমেশন (এসিটি) প্রকল্পের মাধ্যমে এই তথ্য উঠে এসেছে। বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে সংস্থাটি মহমারি করোনা সচেতনতার অভাব ও দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করছে তারা।

ওই জরিপে বলা হয়, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নবাবগঞ্জে ৬৪৫ জন কিশোর-কিশোরীর বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে নিজের ইচ্ছায় ৩৫ জন ও পরিবারের ইচ্ছায় ৬১০ জনের বিয়ে হয়েছে।

বিয়ের পর লেখাপড়া চলমান রয়েছে ৯৯ জনের। বন্ধ হয়েছে ৫৪৬ জনের। বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে ১৮ জনের। আবার বিচ্ছেদ হওয়ার পর পুনরায় বিয়ে হয়েছে ছয় জনের।

বিয়ে হওয়া কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে জয়পুর ইউনিয়নে ৮৩ জন, বিনোদনগর ইউনিয়নে ৬৩ জন, গোপালগঞ্জে ৯৯ জন, শালখুরিয়ায় ৭২ জন, পুঁটিমারায় ৬৬ জন, ভাদুরিয়ায় ৭৮ জন, দাউদপুরে ৪৪ জন, মাহমুদপুরে ৪৯ জন ও কুশদহ ইউনিয়নে ৯১ জন রয়েছে। ওয়ার্ড ভিশনের অ্যাডলোসেন্ট এবং কমিউনিটি ট্রান্সফরমেশন (এসিটি) প্রকল্পের টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর গোলাম মোস্তফা।

তিনি বলেন, ‘নবাবগঞ্জ উপজেলার ৯ ইউনিয়নের এক থেকে ছয় নং ওয়ার্ডে আমাদের ২০ সদস্যের একটি কিশোর-কিশোরী দল রয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা ১০ হাজার ৮০০ জন। এই সদস্যদের মধ্যে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৬৪৫ জন কিশোর-কিশোরীর বাল্যবিয়ে হয়েছে।’

বাল্যবিয়ের শিকার এমন কয়েকজনের অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, ‘যুগ-জমানা ভালো না। সামাজিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। সেই কারণে এবং ভালো ছেলে পাওয়ায় মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি।’

বাল্যবিয়ের হারকে হতাশাজনক বলে জানান ওই প্রকল্প ম্যানেজার উৎপল মিনাজ। তিনি বলেন, ‘বাল্যবিয়ে থেকে উত্তরণ না ঘটলে জাতি মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। শুধু আমরা তো বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পারব না। পরিবার, সমাজ ও প্রশাসন সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

ওয়ার্ড ভিশনের এই প্রকল্পের উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারত জাহান। তিনি বলেন, ‘ছয় মাস ধরে মাতৃকালীন ছুটিতে আছি। বাল্যবিয়ের সংবাদ পেলে তা প্রশাসনিক সহযোগিতায় প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ সোম বলেন, ‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অভিভাবক, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সবার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। তা না হলে বাল্যবিয়ে বন্ধ সম্ভব নয়।’

মন্তব্য

Beta version