সারি সারি আলমারি। সেসব আলমারিতে তাকে তাকে সাজানো শত শত বই। কী নেই সেখানে! স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস থেকে শুরু করে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, বাংলা, ইংরেজি সাহিত্য, কবিতা, ইতিহাস, বিজ্ঞানসহ অনেক বই রয়েছে সেসব আলমারিতে। আছে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা বইও।
ভেতরে সুনসান নীরবতা। এতকিছু সাজানো-গোছানোর পরও নেই শুধু পাঠক। পাঠকখরায় বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ।এ অবস্থার দেখা মেলে জয়পুরহাট লাইব্রেরি অ্যান্ড ক্লাবে। পাঠকশূন্য হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন পাঠাগারটি। পাঠক ফেরাতেও নেই কোনো উদ্যোগ।
জয়পুরহাট শহরের প্রাণকেন্দ্র্র শহীদ ডা. আবুল কাশেম মাঠ। মাঠের পশ্চিম পাশে লাগোয়া জয়পুরহাট লাইব্রেরি অ্যান্ড ক্লাব ভবন। এক তলাবিশিষ্ট একটি ভবনে পড়ার জন্য রয়েছে বই। পাশে আর একটি টিনশেড ভবনে লাইব্রেরির কর্মকর্তাদের কার্যালয় ও মিলনায়তন। ১৯৪৭ সালে জয়পুরহাট লাইব্রেরি অ্যান্ড ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে লাইব্রেরিটিতে ১৬ হাজারের অধিক বই রয়েছে।
১০-১৫ বছর আগেও শিক্ষার্থী এবং সাধরণ পাঠকদের পদচারণায় মুখরিত থাকত লাইব্রেরি ভবন। এখন আর কেউ বই পড়তে আসে না। এখন বিকেলে যে দু-চারজন পাঠক আসেন, তারাও দৈনিক পত্রিকা পড়ে সময় পার করেন।
জয়পুরহাট লাইব্রেরি অ্যান্ড ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজা চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘অনেক বই থাকলেও আগের মতো পাঠক আর লাইব্রেরিতে আসে না। মানুষ আগের মতো বই পড়তে চায় না। আজকালের ছেলেমেয়েরা মোবইল ও কম্পিউটারে মগ্ন। তারা বইবিমুখ হয়ে পড়ছে। তাদের জাতির সবকিছু জানাতে দ্রুত বইয়ের দিকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, ‘সরকারিভাবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের জন্য জয়পুরহাট লাইব্রেরি ক্লাবের জন্য বরাদ্দের ১৯৬টি বই আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২৩টি পরিচিত লেখকের। বাকিগুলো অপরিচিত ও নিম্নমানের লেখকের।
‘বরাদ্দের সময় বইয়ের যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো দেওয়া হয়নি। এসব বই পাঠককে কোনোভাবেই আকৃষ্ট করবে না। এমনিতেই বই পড়তে কেউ আসে না। যে দু-একজন আসেন, তারা ওই বইগুলো ছুঁয়েও দেখছে না। নিম্নমানের বইয়ের কারণে পাঠকবিমুখতা আসবে লাইব্রেরিগুলোতে।’
জানা যায়, জয়পুরহাট জেলা শহরের এ লাইবেরিটি ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত। প্রতি বছর সরকার থেকে ৫৬ হাজার টাকা অনুদান আসে এ লাইব্রেরিতে। তবে এর অর্ধেক ব্যয় হয় বই কিনতে। বাকি টাকা লাইব্রেরি পরিচালনার জন্য। সে টাকায় গ্রন্থাগারিকের সারাবছরের বেতন হয় না। তা ছাড়া লাইব্রেরি ভবনটি দীর্ঘদিনের। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভবনের ভিতরের পিলারগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জয়পুরহাটের এক শিক্ষক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির গাড়িটি জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের দোরগোড়ায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে বই নেয় না। বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকেও কোনো শিক্ষার্থী বই নেওয়ার নজির নেই বললেই চলে। পরিবারের চাপে কোচিং আর প্রাইভেট পড়া নিয়ে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। আর ফেসবুকের নেশা তো আছেই শিক্ষার্থীদের।
জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান তুলসী দাস মোহন্ত।
তিনি বলেন, ‘বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। পারিবারিকভাবে শিশু বয়স থেকে শিশুদের উপযোগী বই তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। জন্মদিনসহ বিভন্ন অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের বই উপহার দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তেলা দরকার। আর্থিক দিক বিবেচনায় প্রতিটি পরিবারে ছোট বড় লাইব্রেরি গড়ে তুলতে পারলে সে পরিবারের ছেলেমেয়েদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে। জাগ্রত হবে দেশপ্রেম।’
মন্তব্য