-->
শিরোনাম

মিউজিকের তালে ছুটে চলা

পুলক পুরকায়স্থ, মৌলভীবাজার
মিউজিকের তালে ছুটে চলা
সুসজ্জিত এই রিকশায় যাত্রীদের নিয়ে ছুটে চলেন শফিক মিয়া

পিচঢালা পথে ছুটে চলেছে ত্রিচক্রযান। বাহারি রঙের ফুল, আলোর সঙ্গে মিউজিকের ছন্দ। কখনো ব্যস্ত সড়কে, কখনো পাড়া মহল্লার অলিগলিতে। এমনই এক সাজে সজ্জিত যানবাহনের নজর কেড়েছে মৌলভীবাজার শহরবাসীর।

শফিক মিয়া শৌখিন এক রিকশাচালক। বয়স পঞ্চাশ ছুঁয়েছে। সদর উপজেলার মাতারকাপন গ্রামে বসতি শফিক মিয়ার। শহরের মানুষজনের কাছে তিনি পরিচিত মুখ। শহরের ব্যস্ততম সড়ক সেন্ট্রাল রোডে দেখা হয় মিউজিকের ছন্দে ছুটে চলা রিকশাচালক শফিক মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তিনি জানান, পায়ের প্যাডেলে চালানো এই রিকশার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ফুল, সিগন্যাল লাইট, সজ্জিতকরণে অন্যান্য লাইট, মিউজিক বক্স এবং ব্যাটারির জন্য অতিরিক্ত প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ কাজ তিনি করেছেন নিজেকে আনন্দে রাখতে এবং অন্যকে আনন্দ দিতে।

তিনি অবলীলায় বলেন, ‘যাদের টাকা আছে তারা কোটি টাকা দামের সাজানো বড় বড় গাড়ি হাঁকান। আমার কাছে আমার রিকশাই বড় গাড়ি, এজন্য আমি আমার রিকশা সাজিয়েছি। আমি রিকশা চালিয়ে যেমন আনন্দ পাই, তেমনি যাত্রীরাও আমার রিকশায় চড়ে আনন্দ পান।’

যাত্রী রায়হান মোর্শেদ বলেন, ‘আমি উনার রিকশায় চড়েছি। উনার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে নিজের জগতে আমোদপ্রিয় একজন সুখী মানুষ তিনি। অল্পতে সুখী থাকা যায় আনন্দে থাকা যায়, যার যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা যায় তার উদাহরণ রিকশাচালক শফিক।’

স্ত্রী, এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে চারজনের সংসার রিকশাচালক শফিক মিয়ার। বড় মেয়ে স্থানীয় একটি ক্লিনিকের সেবিকা। ছোট ছেলের বয়স তিন বছর। ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।

আলাপকালে শফিক মিয়া জানান, তার একটি ফেসবুক আইডি রয়েছে। আইডিতে মোবাইল নাম্বার দেওয়া আছে। যাত্রীরা ফোন দিলে, পৌঁছে দেন তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে। প্রায়ই যাত্রী বুকিং থাকে বলে পথচলতি কোনো যাত্রী রিকশায় উঠাতে পারেন না। ফোন এলেই ছুটে যান যাত্রী সেবায়। এমনকি রাতে কেউ বিপদে পড়ে ফোন দিলে যত দূর হোক যে কোনো সময় তিনি হাজির হয়ে যান।

শফিক মিয়া বলেন, ‘যে কয়দিন বাঁচব আনন্দের সঙ্গে বাঁচতে চাই। আমার ছেলেটাকে লেখাপড়া করিয়ে বড় কিছু করতে চাই। সবসময় মানুষকে আনন্দ দেওয়া ও মানুষের উপকারে আসে এ রকম কাজ করতে চাই।’

‘আল্লাহ্ আমাকে সুখে শান্তিতে রেখেছেন’ উল্লেখ করে তিনি জানান, তাঁর পাঁচটি রিকশা আছে। একটি নিজে চালান, বাকি চারটি ভাড়ায় চলে। প্রতি রিকশা থেকে দৈনিক ৭০ টাকা ভাড়া পান। নিজে রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়। নিজে রিকশা চালিয়ে ও ভাড়া যা পান তা দিয়েই সুখে শান্তিই চলে সংসার।

মন্তব্য

Beta version