ভূমিহীন, দুস্থ ও গরিব মানুষের আশ্রয়ের জন্য সরকারিভাবে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। বছরের পর বছর ধরে এসব ঘর জীর্ণ হয়ে ঘরের চাল ফুটো হওয়া ও বেড়া খুলে পড়ায় অনেকে এখন আর এখানে থাকতে নিরাপদবোধ করছেন না। তাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে অনেকে।
বারবার সরকারি কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও সমাধান না পেয়ে অসহায় মানুষগুলো রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, জরাজীর্ণ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের কাজ করা হবে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা ইউনিয়নে অবস্থিত ডোলোপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্প। ২০০৮ সালে প্রায় ৩.০৪ একর জায়গার ওপরে সাতটি ব্যারাকে ৭০টি পরিবারের জন্য এখানে ঘর নির্মাণ করা হয়। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর ধরে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাঠামোতে কোনো ধরনের সংস্কার করা হয়নি। ফলে ঘরের টিন পুরনো হতে হতে মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে।
বৃষ্টি এলেই এসব টিনের ছিদ্র দিয়ে ঘরের মধ্যে পানি পড়ে, বিছানা-বালিশ ও আসবাবপত্র সব ভিজে যায়। এমন অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে তারা টিনের ওপরে পলিথিন দিয়ে কোনোরকমে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। এমন দুর্ভোগের জীবন সহ্য করতে না পেরে এরই মধ্যে ৩০টি পরিবার অন্যত্র বসবাস করছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী আইবুল হোসেন বলেন, ‘টিন জালের মতো ছিদ্র হয়ে গেছে, বৃষ্টি এলে ঘরের সব কাপড় ভিজে যায়, বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আমাদের কেউ খোঁজখবর নেয় না।’
জামিরন নামের এক নারী বলেন, ‘২০০৮ সালে সরকার আমাদের ঘর দিছে, টিন নষ্ট হওয়ায় আমরা ঘরে থাকতে পারতেছি না। ঘরের মধ্যে পানি পড়ে, বাতাস ঢোকে। আমরা গরিব মানুষ, কাজ করি খাই। একটু যদি থাকার ব্যবস্থা ভালো করে দিত, তা হলে আমাদের সুবিধা হতো।’
ডোলোপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আমরা এখানে ভালোভাবে বসবাস করছিলাম। ঘরের বয়স ১৪ বছর হওয়ায় টিনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরে থাকতে পারতেছি না। আমার প্রশাসনকে জানাইছি, বারবার অভিযোগ দিছি, তারা আমাদের কথার কোনো গুরুত্ব দিতেছে না।’
হাঁড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়্যেদ নুর-ই আলম বলেন, ‘নির্মাণের পর থেকে এখানকার কোনো বাড়িতে সংস্কার করা হয়নি। এ বিষয়ে আমি অনেকবার লিখিতভাবে, মৌখিক আকারে ইউএনও অফিসে বক্তব্য আকারে পেশ করেছি যে- এগুলো যদি সংস্কার করে না দেওয়া হয় বা টিনগুলো যদি পরিবর্তন করে না দেওয়া হয় তা হলে মানুষ এখানে বসবাস করতে পারছে না। সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে গরিব মানুষদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে, সে উদ্দেশ্যটাই ব্যাহত হচ্ছে।’
পঞ্চগড় সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুল হক বলেন, ‘ডোলোপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি সচিত্র প্রতিবেদন আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রকল্পটি দ্রুত সংস্কার করব। এর মধ্যে অনেক উপকারভোগী সচ্ছল হয়ে নিজ নিজ বাড়ি তৈরি করে চলে গেছেন।’
মন্তব্য