-->

এক গোয়ালে ৪ পশু ছয় মানুষ!

সোহেল রানা, ঠাকুরগাঁও
এক গোয়ালে ৪ পশু ছয় মানুষ!
এই ঘরেই গরু-ছাগলের সঙ্গে বসবাস করেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফরিদ ইসলাম ও তার পরিবার

‘মাটির একটি ভাঙা ঘর। এবারের মাঘে অসময়ের বৃষ্টিতে আমার চার সন্তান ঘুমাতে পারেনি। চোখে না দেখলেও বুঝতে পারছিলাম। কনকনে শীত সহ্য করতে না পেরে কান্না করছিল ওরা। সে সময়ের তীব্র শীত আর ঝড়ো হাওয়ায় ওরা বাঁচবে কি না ভেবে আতঙ্কিত ছিলাম।’ কথাগুলো বলছিল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফরিদ ইসলাম।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা তিনি। এক শীতের রাতে রাস্তায় দুই তরুণের সঙ্গে দেখা হয় ফরিদের। তরুণ যুবকরা স্থানীয় নবগঠিত সামাজিক সংগঠন ‘আকচা তরুণ শক্তি’ এর সদস্য। তারা ফরিদকে তার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন। সেখানে গিয়ে তারা দেখা পায় এক মানবিক চিত্র।

ফরিদ ইসলাম যে ঘরে থাকেন তা মূলত গোয়াল ঘর। ওই ঘরে তিনটি ছাগল ও একটি গরুও থাকে। একটি মাত্র খাট। খাটে ঘুমিয়েছে স্ত্রীসহ সন্তানরা। নেই কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ। বিদ্যুতের বিপ্লবের যুগে ফরিদের সাঝবাতি নব্বইয়ের হারিকেন।

জন্মের দুবছর পর টায়ফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান ফরিদ। শুধু মাত্র আবছা আন্দাজের ওপর জীবনযাপন করেন তিনি। বাজারে শাক বিক্রি করে দৈনিক ৫০-১০০ টাকায় চলে তার সংসার। কোনো কোনো দিন লোকসানের হিসেবও গুণতে হয় তাকে।ফরিদের চার সন্তান। বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। দুই ছেলে স্কুলে যায়। আর ছোট মেয়ের বয়স এখন এক বছর।

ফরিদ বলেন, ‘আমি একজন অন্ধ হলেও আমার স্ত্রী-সন্তানের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারি। এক খাটের ওপর সকলকে ঘুমায়। নেই তেমন শীতবস্ত্র। একটু বৃষ্টিতে ঘরে পানি জমে যায়। পুরোনো মাটির ঘরটি কখন ভেঙ্গে পড়ে সপরিবারে মারা যাই ঠিক নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাতে ঘুম আসে না রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করি। ঘরে মাটিতে ঘুমাতে পারি না। গরু-ছাগলের মলমূত্র-দূর্গন্ধ গায়ে মেখে এভাবেই থাকতে হয়। বিশ্বাস না হলে আমার ঘরটা দেখে যান। আমি অসহায়। আমার ঘর বানানোর সামর্থ্য নেই।’

আকচা তরুণ শক্তি সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ ইসলাম বলেন, ওই গ্রামে ফরিদ ইসলামের মতো অসহায় ব্যক্তি আর দ্বিতীয়টা নেই। সবাই মিলে সহায়তা করার চেষ্টা করছি। এই গ্রামের সবাই শ্রমিক। সরকারের পক্ষ থেকে ফরিদকে একটি ঘর দিলে সে খুব উপকৃত হত।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক রহমত উল্লাহ্ বলেন, ফরিদ ধামির্ক ছেলে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। অন্ধ হয়েও সে ভিক্ষা করে না। সম্মান নিয়ে সে চলতে পারে। সরকার তাকে সামান্য সহযোগিতা করলেও সে সম্মান নিয়ে বাঁচতে পাড়বে। তাকে সরকার থেকে একটি বাড়ির ব্যবস্থা করলে ফরিদ নিশ্চিন্তে রাতে ঘুমাতে পারবে।

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কুলুরাম রায় বলেন, ফরিদকে গুচ্ছগ্রামে একটি ঘর দিতে চেয়েছিলাম। ফরিদ বলেছিল ওখানে সে চলাফেরা করতে পারবে না। পরে ভেবে দেখলাম অন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না। তবে ফরিদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা জরুরি।

সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। আমরা খোঁজ নিয়ে অবশ্যই একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মন্তব্য

Beta version