-->
শিরোনাম

কলাইরুটিতে জমেছে ঠাকুরগাঁও

সোহেল রানা, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
কলাইরুটিতে জমেছে ঠাকুরগাঁও
কলাইরুটিতে জমেছে ঠাকুরগাঁও

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কলাই রুটি এখন ঠাকুরগাঁও সদরের মথুরাপুরে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত কলাই রুটি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। বিখ্যাত এ খাবার খেতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন ভোজনপ্রিয় মানুষ। এতে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে ওই বাজারে।

১৫ দিন আগে ছোট পরিসরে বিসমিল্লাহ্ ফুডস নামে একটি দোকান চালু করা হয়। কলাই রুটি বানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন দুই ভাই মোহাম্মদ আবু ও আবু বক্কর। এর মাঝেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে চাঁপাইয়ের কলাই রুটি। ক্রেতাদের ভিড় বাড়ায় এখানে ছোট পরিসর থেকে রুটি বানানোর আয়োজন প্রসারিত হচ্ছে।

রুহুল পন্ডিত নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘মথুরাপুর একটি ছোট বাজার। গ্রামের মানুষ ছাড়া খুব একটা ভিড় দেখা যায় না। কিন্তু কলাই রুটির উদ্যোগ গ্রহণ করার পর এখানে জেলার ও জেলার বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন আসছে। অনেক সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা তাদের পরিবার নিয়ে আসছে। বাজারটায় বিকেল হলেই উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।’

প্রথমবারের মতো কলাই রুটি খেয়ে নিজের অনুভূতির কথা জানালেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সানমুন মুস্তারি। তিনি বলেন, ‘এর আগে বই পুস্তকে চাঁপাইয়ের বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী খাবার কলাই রুটির নাম শুনেছি। কখনো খাওয়া হয়নি। আজ প্রথম কলাই রুটি খেলাম। খাবারটা দারুণ সুস্বাদু। আমি খেয়েছি এবং পরিবারের জন্য পার্সেলও করে নিয়েছি।’

ঠাকুরগাঁওয়ে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন চাঁপাইয়ের তৌহিদ সাফায়াত। তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দেখে কয়েকজন বন্ধু মিলে এখানে কলাই রুটি খেতে এসেছি। কয়েক বছর ধরে নিজ জেলা যাওয়া হয় না। কলাই রুটিও খাওয়া হয় না। জিভে স্বাদ লেগেছিল। এই জেলা শহরেই ভাড়া থাকি। পাশেই কলাই রুটি পাওয়া যাচ্ছে শুনে লোভ সামলাতে পারিনি। এখানকার কলাই রুটি আর বাহারি ভর্তা চাঁপাইয়ে কাটানো অনেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গো। আমি উদ্যেক্তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

কলাইরুটি বানানোর প্রক্রিয়া

এটি সংরক্ষণযোগ্য খাবার। যা মাষকলাই ও আতপ চালের আটা বা ময়দা, লবণ এবং পানি দিয়ে তৈরি করা হয়। প্রথমে মাসকালাই ও আতপ চাল পাটাতে বা যাঁতাতে পিষে আটা বানানো হয়। মেশিনে তৈরি আটা দিয়েও কালাই রুটি বানানো গেলেও পাটায় পিষ্ট আটা দিয়ে কালাই রুটি বানালে স্বাদ বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে স্বাদমতো লবণ ও প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি মিশিয়ে খামির তৈরি করা হয়। খামির থেকে ছোট বল পরিমাণ আটা নিয়ে গোলাকার করা হয়। এরপর দুই হাতের তালুতে রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বড় রুটি বানানো হয়। সাধারণত গমের রুটির চেয়ে কালাই রুটি অধিক পুরু এবং বড়। এরপর রুটিটিকে মাটির তাওয়াতে সেঁকে গরম করা হয়। রুটির রং বাদামি হয়ে গেলে নামিয়ে নেওয়া হয়।

বিসমিল্লাহ্ ফুডসের কর্ণধার উদ্যোক্তা আবু বক্কর বলেন, ‘স্বাদ ও খাবারের মান ঠিক রেখে আমরা কলাই রুটি বানাই। ছোট পরিসরে মাত্র দুই হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেছি। এখন সারাদিনে ভালোই বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের থেকে ভালো ভালো মন্তব্য আমাকে উৎসাহ বাড়াচ্ছে। কালাই রুটির সঙ্গে সাধারণত বেগুন ভর্তা, শুকনো মরিচ ভর্তা, বট, পেঁয়াজ ভর্তা, মাংস ভুনা ইত্যাদি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। কিন্তু আমার মূলধন কম থাকায় এখনো বট ও মাংস ভুনা চালু করতে পারিনি। তবে খুব শিগগিরই এসব দিয়েও পরিবেশ চালু হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও সদরে আমরাই প্রথম কলাই রুটি বানাতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর আগে এ শহরে এ খাবার কেউ বানায়নি। এই উদ্যোগটা মানুষের মাঝে এত জনপ্রিয়তা পাবে তা কল্পনাও করিনি।’

স্থানীয় রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান হান্নু বলেন, ‘চাঁপাইয়ের বিখ্যাত কলাই রুটি তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে ইউনিয়নকে একটি বাড়তি পরিচিতি দিচ্ছে উদ্যোক্তারা। প্রতিদিন কলাই রুটি খেতে এখানে অনেক মানুষ আসছে। বিশেষ করে এর জনপ্রিয়তা আশপাশের পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলাতেও ছড়িয়েছে। আমি উদ্যোক্তাদের পাশে আছি।’

মন্তব্য

Beta version