-->
শিরোনাম

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের কথা বলে ‘ত্রিশূল’

শফিক ছোটন, নওগাঁ
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের কথা বলে ‘ত্রিশূল’

সঠিক চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজ সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে নওগাঁর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ত্রিশূল’।

এই সংগঠনের কর্মীরা তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির অটুট বন্ধন তৈরিতেও অনন্য ভূমিকা রাখছে।সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে ‘সোপার্জিত কৃষ্টির নীত’- স্লোগানে ২০১৯ সালে নিজ এলাকার ৩০ জন সাঁওতাল শিল্পী নিয়ে ত্রিশূল নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন প্রকৌশলী ও নৃত্যশিল্পী তৃণা মজুমদার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নওগাঁর বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গ্রামে বেশকিছু সাংস্কৃতিক দল গড়ে তুলেছে ত্রিশূল।

এই সংগঠনের শিল্পী সংখ্যা বর্তমানে ৫শ ছাড়িয়েছে। ত্রিশূলের কর্মীদের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল ও উড়াও সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ত্রিশূলের কর্মীরা তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি তুলে ধরছে।

প্রতিষ্ঠার তিন বছরে সংগঠনটি এ পর্যন্ত বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশ নিয়ে সবার নজর কেড়েছে। ২০১৯ সালের ২২-২৫ নভেম্বর কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে নৃত্যশিল্পীদের সংগঠন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্স, এশিয়া প্যাসিফিক’-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যালে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে নওগাঁর বাইরে সাংস্কৃতিক উৎসবে প্রথম অংশ নেয় ত্রিশূল।

এ ছাড়া ভারতের ছত্রিশগড়ের রায়পুরে ‘ন্যাশনাল ট্রাইবাল ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল’, সুইজারল্যান্ডের জেনেভা ও ভারতের আগরতলায় ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ড ডে প্রোগ্রাম’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসব, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে জাতীয় নৃত্য উৎসব-২০২২ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০-এ ত্রিশূলের নৃত্য পরিবেশনা ছিল উল্লেখযোগ্য।

এ ছাড়া থাইল্যান্ড ও আমেরিকায় ড্যান্স ফেস্টিভ্যালে ত্রিশূলের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা তৃণা মজুমদার অংশ নিয়ে নৃত্য পরিবেশন করেছেন।

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আর্তমানবতার কাজে ত্রিশূলের কর্মীরা নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। করোনা মোকাবিলার জন্য ত্রিশূলের কর্মীরা নিজ হাতে সেলাই করে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার মাস্ক বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও সাবান বিতরণ করা হয়েছে।

সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি ডিএম আব্দুল বারী বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের নিজ সংস্কৃতির সঙ্গে পশ্চিমা সংস্কৃতি এতটাই মিশে গেছে যে একদম গোড়াতে ফিরে যাওয়া অনেক কষ্টের। তবে ত্রিশূলের কল্যাণে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হারিয়ে যেতে বসা লোকজ সংস্কৃতিগুলো আবারও জেগে উঠছে।’

ত্রিশূল সংগঠনের সভাপতি তৃণা মজুমদার বলেন, ‘ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের কথা বলে ত্রিশূল। মূলত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে কাজ করে। এতে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত হওয়ার পাশাপাশি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রীতির একটা অটুট বন্ধন তৈরি হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

মন্তব্য

Beta version