-->
শিরোনাম

একটি গাছ থেকে ১০ বিঘা বাগানের মালিক

আসাদ জামান, মানিকগঞ্জ
একটি গাছ থেকে ১০ বিঘা বাগানের মালিক
দুলাল মিয়ার বরই বাগান

ডালে থোকায় থোকায় ধরে আছে বরই, যেন পাতার চেয়ে গাছে বরইয়ের সংখ্যাই বেশি। আর পরিপক্ব বরইগুলো দেখতে লাল আপেলের মতো। খেতেও মিষ্টি।

বাগানটি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের উকিয়ারা গ্রামের মেহের আলীর ছেলে দুলাল মিয়ার। প্রায় ২২ বছর আগে শখ করে ব্র্যাক নার্সারি থেকে আপেল কুলের একটি চারা কিনে নিজ বাড়িতে লাগান তিনি। কয়েক মাস যেতে না যেতেই সেই গাছে ফল আসে। বরই খেতে মিষ্টি হওয়ায় বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন দুলাল। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

বর্তমানে উকিয়ারা গ্রামে নিজ বাড়ির পাশে ১০ বিঘা জমিতে বাগান করেছেন দুলাল। তার বাগানে চার রকমের বরই গাছ রয়েছে। মাটির সামান্য উপর থেকেই বরই গাছের ডালপালা চারদিক ছড়িয়ে পড়েছে। বরইয়ের ভারে প্রতিটি ডাল মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এছাড়া তার বাগানে উন্নত জাতের লিচু, আম, পেয়ারা, খেজুর ও লেবু গাছও রয়েছে। ফল বিক্রির পাশাপাশি চারাও বিক্রি করেন দুলাল। তার এই বাগানে ১০ জন কর্মচারী রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুলাল মিয়া প্রতি মণ আপেল কুল ও কাশ্মীরি কুল সময়ভেদে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি করেন। আর এক সপ্তাহ পর থেকে ভারতসুন্দরী ও বলসুন্দরী বরই বিক্রি শুরু হবে। সেগুলো ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হবে।

স্থানীয় পাইকার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই বাগানের কুলের চাহিদা অনেক। পরিপক্ব ও মিষ্টি হওয়ার কারণে আমি চার বছর ধরে তার কাছ থেকে বরই কিনে বাজারে বিক্রি করছি। যারা আমার কাছ থেকে একবার এই বরই কেনেন, তারা আবার আসেন।’

দুলাল মিয়া বলেন, ‘বেকার অবস্থায় বিয়ে করি। সংসার কীভাবে চালাব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ওই সময় ব্র্যাক নার্সারি থেকে শখ করে একটি আপেল কুলের চারা কিনে লাগিয়েছিলাম। কয়েক মাসের মধ্যে গাছে বরই ধরে এবং খেতে মিষ্টি হয়। এরপর আমি ও আমার স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নিই আমরা বরইয়ের বাগান করব।’

‘বাড়ির পাশে ১০ বছরের জন্য দুই বিঘা জমি লিজ নিই। সেখানে আপেল কুল ও ভারতীয় কাশ্মীরি কুলের ১৫০টি চারা লাগাই। সাত থেকে আট মাস পরই গাছে ফল আসে। সেই বরইগুলো দেখতে অনেকটা ছোট ছোট আপেলের মতো আর মিষ্টি হয়। সে বছরই আরো দুই বিঘা জমি লিজ নিই। এমন করে এখন ১০ বিঘা জমির উপর আমার বাগান রয়েছে।’

দুলাল বলেন, ‘বর্তমানে আমার এই বাগানে আপেল কুল, কাশ্মীরি কুল, ভারতসুন্দরী ও বলসুন্দরীর প্রায় ৮০০ গাছ রয়েছে। প্রতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বরই বিক্রি করে থাকি। বাজার দর ভালো থাকলে এই দুই মাসে প্রায় আট থেকে ৯ লাখ টাকার ফল বিক্রি হয়। আর জমি খরচ, শ্রমিক খরচ ও চাষ খরচ বাদ দিয়ে বছরে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় করি।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে আমার বাগানে উন্নত জাতের লিচু, আম, পেয়ারা, খেজুর ও লেবুর গাছও রয়েছে। আমি বছরে মাত্র দুই মাস বরই বিক্রি করি, আর বাকি ১০ মাসের চিন্তা করেই অন্য ফলের গাছগুলো লাগিয়েছি। যাতে করে সারা বছরই ফল বিক্রি করতে পারি।

‘বরইয়ের পর আবার লিচু ও আম বিক্রি করব, তারপর পেয়ারা। আর লেবু সারা বছরই থাকে। এসব ফল থেকেও বছরে আরো দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় হয়। এছাড়া আমার এই নার্সারি থেকে প্রতি বছর প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার চারা বিক্রি হয়’, বলেন দুলাল।

জাগির ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, দুলাল মিয়া অনেক পরিশ্রমী একজন মানুষ। তার দেখাদেখি অনেকেই এখন বাগান করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এলাকার মধ্যে তিনি একজন আদর্শ কৃষক।

মন্তব্য

Beta version